মেঘনা তীরবর্তী ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন বরাবরই ভাঙনপ্রবণ এলাকা। প্রতি বর্ষাতেই মেঘনা উত্তাল হলে ভাঙতে থাকে এ ইউনিয়ন।
এ মৌসুমে গত ১০ দিন ধরে উজানের ঢলে মেঘনার প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘূর্ণিস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। তাতে ভাঙছে পাড়।
এরই মধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে রাজাপুর ইউনিয়নের জোড়খাল এলাকায় প্রায় ৪০০ মিটার অংশ। আতঙ্কে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।
ভাঙন তীব্র হয়েছে গত চার-পাঁচদিন ধরে। স্থানীয়রা বলছেন, বসতবাড়ি, দোকানপাট ছাড়াও বিলীন হয়েছে কৃষিজমি, মাছঘাট ও মসজিদ। নদী চলে এসেছে প্রায় ৭০ মিটার ভেতরে।
স্থানীয় আজাহার উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আইলেই নদী ভাঙন শুরু হয়। আমাদের বাড়ি নদীতে নিয়ে গেছে এই পর্যন্ত পাঁচবার। কয়েক বছর আগে আমাগো বাড়ি ছিল নদী থেকে কয়েক মাইল দূরে। সেইখানেও ভাঙছে। এখন এইখানে আশ্রয় নিছি; এখানেও ভাঙছে। এখন নিজেস্ব কোনো জায়গা নাই।’
এলাকার কৃষক রহমত উল্ল্যাহ বলেন, ‘এইখানে আমার বাড়ি ছিল। কৃষিজমি ছিল। মেঘনার ভাঙনে সব নিয়ে গেছে। এখন আমার সব শেষ।’
নদীতে ঘর হারিয়ে দিশেহারা এমন শতাধিক পরিবার
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উজানের তীব্র পানির স্রোত আমাদের উত্তর রাজাপুরের জোড়খাল এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ড ভাইঙ্গা বিলীন হইয়া যাইতাছে। এইখানে ভাঙন এত বেশি যে মানুষ ঘরবাড়ি সরানোর সময়টাও পাইতাছে না। এইখান থেকে মূল শহর রক্ষা বাঁধ মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে। ওই বাঁধ ভাইঙ্গা গেলে পুরা শহর পানিতে তলাইয়া যাইব।
‘এইখানে ভাঙনের পাশে বড় একটি প্রকল্পে কাজ করছে ব্লকের। এইখানে ভাইঙ্গা গেলে ওই বড় প্রকল্পটাও হুমকির মধ্যে পইড়া যাইব। দ্রুত রাত-দিন খাইটা ভাঙন প্রতিরোধে বালুভর্তি জিও টিউব ফালাইতে হবে, যাতে পানির স্রোতটা অন্যদিকে যায়। তাহলে ভাঙন কিছুটা রোধ হইব।’
রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, এটি একটি প্রাচীন এলাকা। মেঘনা এখানে এখন তীব্রভাবে ভাঙছে। বিলীনের ঝুঁকিতে এখন আছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ছয়টি বাজার, ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১০ হাজার পরিবারের বাড়ি ও কয়েক হেক্টর ফসলি জমি।
এই ইউনিয়নটিকে রক্ষা করতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
ভাঙন কবলিত এলাকা শুক্রবার পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) তৌফিক ইলাহী চৌধুরী, ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক বাবুল আকতার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমানসহ প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
ডিসি তৌফিক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে মিলে এই জোড়খাল এলাকার মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে কাজ করছি। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও টিউব ফেলা হচ্ছে।
‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক মনিটরিং করা হচ্ছে যেন ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। এ ছাড়াও যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে, তাদের খাবার সহায়তাসহ পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) মিজানুর রহমান বলেন, ‘জোড়খালের এই এলাকাটি হচ্ছে মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীর মোহনা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উজান থেকে নেমে আসা পানি। তার জন্য এই নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
‘এরই মধ্যে আমরা রাজাপুর এলাকায় ভাঙন রোধে বাংলাদেশ সরকারের ৩৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজাপুর এলাকাকে নদী ভাঙনের হাত থেকে টেকসইভাবে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এখন প্রাথমিকভাবে জিও টিউব দেয়া হচ্ছে।’