বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রলারডুবি: এখনও নিখোঁজ ৪০

  •    
  • ২৮ আগস্ট, ২০২১ ০১:৩১

‘সব মিলে ট্রলারে শতাধিক যাত্রী ছিল। সেটি লইস্কা বিলে বালুবোঝাই একটি ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তলিয়ে যায়। স্বামী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে সাঁতরে তীরে আসি। কিন্তু আরেক ছেলে, শাশুড়ি ও ভাশুরের তিন ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় যাত্রীবোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনও ৪০ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান শুক্রবার রাত ১২টার দিকে জানান, ট্রলারের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এখনও ৪০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উদ্ধার অভিযান চলছে।

এর আগে উপজেলার লইস্কা বিলে শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় রাত ১১টা পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১৩ জনকে। আহত ১৬ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মুমূর্ষু পাঁচজন।

নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার মোমেনা বেগম ও কাজল বেগম, দাতিয়ারা এলাকার ১২ বছরের তাসফিয়া মিম, সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আট বছরের তানভীর, চিলোকুট গ্রামের আট বছরের তাকুয়া, নরসিংসার গ্রামের সাত বছরের সাজিম ও ভাটপাড়া গ্রামের শারমিন।

বিজয়নগর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের আরিফ বিল্লাহ, বেড়াগাঁও গ্রামের মঞ্জু বেগম, ফরিদা বেগম ও তার ১০ বছরের মেয়ে মুন্নি ও কমলা বেগম, নূরপুর গ্রামের মিনারা বেগম, আদমপুর গ্রামের অঞ্জনী বিশ্বাস ও পরিমল বিশ্বাসের দুই বছরের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস এবং ময়মনসিংহের ঝর্ণা বেগম।

নিহতদের মধ্যে রাত ১১টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১৭ জনের দেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দাফনের জন্য স্বজনদের দেয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা।

দুর্ঘটনার পর সাঁতরে তীরে উঠেছিলেন সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আঁখি আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিজয়নগরের চম্পকনগর ঘাট থেকে আনন্দ বাজার ঘাটে যেতে ট্রলারে উঠি। সঙ্গে ছিল স্বামী মুরাদ মিয়া, দুই ছেলে, শাশুড়ি ও ভাশুরের তিন ছেলে।

‘সব মিলে ট্রলারে শতাধিক যাত্রী ছিল। ট্রলারটি লইস্কা বিলে বালুবোঝাই একটি ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তলিয়ে যায়। স্বামী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে সাঁতরে তীরে আসি। কিন্তু আরেক ছেলে, শাশুড়ি ও ভাশুরের তিন ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না।’

হাসপাতালে ভর্তি মুরাদ মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এটি ডুবে যায়। তারপর অনেক কষ্টে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সাঁতরে ওপরে উঠেছি। আমার এক ছেলে, মা ও তিন ভাতিজা এখনও নিখোঁজ রয়েছে।’

লইস্কা বিল এলাকায় নিখোঁজ ভাইয়ের জন্য আহাজারি করছিলেন এনামুল ইসলাম মান্না মিয়া। তিনি জানান, তার ভাই সিরাজুল ইসলাম মনিপুর ঘাট থেকে ট্রলারে ওঠেন আনন্দবাজারে যাওয়ার জন্য। তার ভাই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

দুর্ঘটনার ৭ ঘণ্টা পার হলেও এনামুলের মতো অনেকে তাদের স্বজনদের খুঁজে পায়নি। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও বিল এলাকা।

নিখোঁজদের সন্ধানে রাত ১টা পর্যন্ত তৎপর চালিয়েছেন এলাকাবাসী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, ট্রলারডুবির খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তারা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডুবুরি দল না থাকায় কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে ডুবুরিরা এলে মূল অভিযান শুরু হবে।

উদ্ধার কাজ শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করার পর জানা যাবে।

তবে রাত ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি।

তদন্ত কমিটি

ট্রলারডুবির ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর