বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্রলীগের জন্য ছুটির দিনেও ব্যস্ত ডাকসুর কর্মচারীরা

  •    
  • ২৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০৮

‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শুধু রুমটা ব্যবহার করি। আমাদের কাজের জন্য ছুটির দিনেও কর্মচারীদের অফিসে আসতে আমরা একবারও বলিনি। তারা অনর্থকই আসে। আমি হলফ করে বলছি, অক্সিজেন সেবার কোনো কাজ কর্মচারীদের দিয়ে আমরা করাইনি। ছাত্রলীগের অনেক স্বেচ্ছাসেবক থাকতে তাদের প্রয়োজন নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবন ব্যবহার করেই ‘বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা’ চালাচ্ছে ছাত্রলীগ।

প্রতিদিন এ সেবা চালু থাকায় ভবনের কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের ছুটির দিনেও উপস্থিত থাকতে হচ্ছে অফিসে।

সাধারণত সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস চললেও মাঝে মাঝে রাত ১০টা পর্যন্তও থাকতে হচ্ছে তাদের। তবে এর জন্য তাদের কোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয় না।

জানা যায়, ডাকসু ভবনের কাজে তিনজন কর্মচারী এবং একজন কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। তাদের অতিরিক্ত কাজের (ওভারটাইম) পারিশ্রমিকের একটি আবেদন ডাকসুর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়। ডাকসুর বর্তমান কমিটির মেয়াদ না থাকায় পারিশ্রমিকের আবেদনকে ‘অনৈতিক’ উল্লেখ করে অনুমোদন দেননি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।

ভবনের কাজে নিয়োজিত একাধিক কর্মচারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জন্য কথা বলার কেউ নেই। অক্সিজেন সেবা শুরু হওয়ার পর বন্ধের দিনেও আমাদের অফিসে থাকতে হয়। আমাদেরও তো পরিবার আছে। তাদেরও সময় দিতে হয়, ঘুরাফেরা করতে ইচ্ছা হয়, সেটিও পারি না। আমরা হুকুমের গোলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই ডিউটি না করে টাকা নিচ্ছে, অথচ আমরা অতিরিক্ত ডিউটি করেও টাকা পাচ্ছি না। আজাদ স্যার (আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার) বলেছেন, ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে আমাদের এ অতিরিক্ত সময়ের পারিশ্রমিক নিয়ে দিবেন। সে আশ্বাসেই আমরা কাজ করছি।’

তবে অক্সিজেন সেবার জন্য ভবনের কর্মচারীদের কোনো অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন এ সেবা কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক আসিফ তালুকদারের।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শুধু রুমটা ব্যবহার করি। আমাদের কাজের জন্য ছুটির দিনেও কর্মচারীদের অফিসে আসতে আমরা একবারও বলিনি। তারা অনর্থকই আসে। আমি হলফ করে বলছি, অক্সিজেন সেবার কোনো কাজ কর্মচারীদের দিয়ে আমরা করাইনি। ছাত্রলীগের অনেক স্বেচ্ছাসেবক থাকতে তাদের প্রয়োজন নেই।’

ভবনের সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের কর্মচারীরা তাদের কোনো কাজ করে না এটা ঠিক। কিন্তু তারা যেহেতু প্রতিদিন অফিসে আসে ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মচারীদেরও তো প্রতিদিন আসতে হয়। কর্মচারীদের এই অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিকের জন্য আমি ডাকসুর কোষাধ্যক্ষের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করেছি। প্রশাসন টাকা না দিলে আমাদের কর্মচারীরা এই অতিরিক্ত কাজ করবে না।’

ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মসূচিটা ভালো। কিন্তু তাদের এ কর্মসূচির জন্য ডাকসু ভবন কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো ছাত্রলীগের কার্যালয় না। তাদের তো বিশাল বড় পার্টি অফিস আছে। কয়েক দিন আগে আমি দেখেছি, ডাকসু ভবনের ছাদে বিয়ারের ক্যান। মাদকের আখড়া বসানোর জন্য ভবনকে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সেটিও খুঁজে বের করা দরকার।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে এ ভবন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়, সে প্রশ্নও রাখেন নুর। তিনি বলেন, ‘ভবন ব্যবহার করতে দেয়া নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। ছাত্রলীগের কাজ করবে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে তাদের জন্য আবার ওভার টাইমের টাকা দিতে হবে—এটা তো মামা বাড়ির আবদার।’

এ বিষয়ে ডাকসুর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, এই দুঃসময়ে কেউ ভালো কাজ নিয়ে এগিয়ে এলে তার সঙ্গে কর্মচারীদের ওভার টাইমের প্রাসঙ্গিকতা নেই। কর্মচারীদের ‘পরিবারকে সময় দিতে হয়’ এগুলো লেইম এক্সকিউজ। ওদের বুঝতে হবে, মাসের পর মাস সব কিছু বন্ধ, কোনো কাজ নেই। তার ভেতরেও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বেতন দিয়ে যাচ্ছে। এরপরও এ ধরনের কথাবার্তা খুব সংগতিপূর্ণ নয়।’

এ বিভাগের আরো খবর