আফগানিস্তান ধর্মীয় গোষ্ঠী তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সেখান থেকে বিভিন্ন দেশের কর্মী প্রত্যাহারের মধ্যে কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণে বিপুল প্রাণহানিতে বিপাকে পড়েছেন সে দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি কর্মীরাও।
ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি দেশটিতে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন যে সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। দেশটি ধর্মীয় এই গোষ্ঠীর অধীনে যাচ্ছে, তা অনেকটা অনুময়েই ছিল। আর এ কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের কর্মীদের প্রত্যাহার-প্রক্রিয়াতে ছিল।
কিন্তু অপ্রত্যাশিত দ্রুততায় তালেবান কাবুলে দখল করে আর প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে।
এরপর আফগান ছাড়তে হুড়মুড় করে বিমানবন্দরে ছুটতে থাকে সে দেশের মানুষ। এ কারণে বিদেশিদের সে দেশ ত্যাগের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ৩১ আগস্টের মধ্যে সেনা ও কর্মী প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায় আছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার কাবুলে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে পরপর দুটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসহ ওই হামলায় নিহত হয় অন্তত ৯০ জন।
এই হামলায় নাম এসেছে আরেক উগ্রপন্থি ইসলামিক স্টেট খোরাসানের, যারা পরিচিতি পেয়েছে আইএস-কে নামে।
তালেবানের সঙ্গে তাদের বিরোধ তৈরি হয়েছে এ কারণে যে, তারা আরও বেশি কট্টর ধর্মীয় ব্যবস্থা প্রয়োগের পক্ষে। তালেবান পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনা করছে, এটি তাদের পছন্দ নয়। আর তালেবান নমনীয় হওয়ায় তাদের বহু কর্মী আইএস-কেতে যোগ দিচ্ছে।
কাবুল দখলের পরে আইএস-কের এক নেতাকে শিরশ্ছেদ করে তালেবান আর এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এতে করে দেশটিতে আবার নতুন সংকট দেখা দেয় কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছে দেশ ছাড়তে মরিয়া আফগানরা। ছবি: এএফপি
কাবুল বিমানবন্দরে যেদিন বিস্ফোরণ ঘটে, সেদিন সকালে যুক্তরাষ্ট্রের সাপোর্ট ফোরাম, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), ইউএসএআইডি ও বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ১৪ থেকে ১৫ জন বাংলাদেশির দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তারা ফিরতে পারেননি। এখন সেখানে যে নিরাপত্তার নতুন সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে তালেবান তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয় ও তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় এসব চৌকিতে পৌঁছেও কাবুল বিমানবন্দরে প্রবেশের সুযোগ পাননি আটকা পড়া বাংলাদেশিরা।
এই আটকে পড়াদের একজন আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি আফগান ওয়্যারলেসের পিবিএক্স অ্যান্ড কন্ট্যাক্ট সেন্টার অপারেশনসের প্রধান রাজিব বিন ইসলাম।
নিউজবাংলাকে রাজিব বলেন, ‘আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি এনওসি চেয়েছিলাম, যাতে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হলে বা তার আগে অন্য কোনো বিশেষ বিমানে সুযোগ হলে ফিরতে পারি।
‘সেটা পেয়েছিলামও, কিন্তু ফেরা হয়নি। ১৪ ঘণ্টা তালেবান চৌকিতে অবস্থান করে আমাদের আবার কাবুলেই ফিরতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই হতাশার যে, এমন পরিস্থিতিতে রওনা দিয়েও দেশে যেতে পারিনি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দক্ষিণ এশিয়া) মাশফি বিনতে শামস্ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যতটুকু জানি কাবুলে আটকে পড়াদের কেউই সমস্যায় নেই। তারপরও যারা দেশে ফিরতে চান, আমরা তাদের ফেরাতে চেষ্টা করছি। তাদের নিরাপদেই দেশে ফেরানো হবে।’