জয়পুরহাটের এক বিচারককেও উড়ো চিঠিতে প্রচলিত ধারায় বিচারের পদ্ধতি পাল্টে দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশে বিচার-আচার হবে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী।
চিঠিতে নারীদের ‘প্রশ্রয় না দিতে’ সেই বিচারককে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, শিগগির বাংলাদেশ দখল করে নেয়া হবে। সে সময় নারীদের অধিকার খর্ব করা হবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জয়পুরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রুস্তম আলী চিঠিটি পান।
চিঠির প্রেরক হিসেবে জয়পুরহাট সদর উপজেলার দুর্গাদহ ভাদশা এলাকার আশরাফ আলী নামে একজনের নাম লেখা রয়েছে। তবে ওই এলাকায় এই নামে কেউ নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। চিঠিটি পাঠানো হয়েছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে।
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা শুক্রবার এই চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার ধারণা, একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
তালেবানের নামে জয়পুরহাটে বিচারককে পাঠানো চিঠি। ছবি: নিউজবাংলা
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার আগে আগে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধর্মীয় কট্টর গোষ্ঠীটির পক্ষে লড়াই করতে বাংলাদেশ থেকেও অনেকে আফগানিস্তান গেছে।
৮০-র দশকে মুজাহিদদের পক্ষে আর ৯০ দশকে তালেবানের পক্ষে লড়াই করতে বাংলাদেশ থেকে কওমি মাদ্রাসার বহু ছাত্র-শিক্ষক আফগানিস্তান গিয়েছেন। ৯০ দশকের শুরুতে আফগান ফেরত মুজাহিদিনরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ প্রতিষ্ঠা করেন।
আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ে বাংলাদেশেও তাদের সমর্থকরা যে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে, তা সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট।
জয়পুরহাটের বিচারকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘আফগানিস্তানের মতো অতি শীঘ্রই বাংলাদেশ দখল হবে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত, শিবির এদের আমরা পছন্দ করি না। তালেবানরা অন্যায়ের পক্ষে নয়, ন্যায়ের পক্ষে। বাংলাদেশ চলবে তালেবানের অধীনে। বিচার-আচার হবে কোরান-সুন্না অনুযায়ী।
‘প্রতিটি গ্রামের বিচার গ্রামেই হবে, এ জন্য সরদার নিয়োগ হবে। বাদী-বিবাদীকে ডেকে মামলা আপোষ করার ব্যবস্থা করিবেন।’
দেশে মেয়েদের কোনো ধরনের স্বাধীনতা দেয়া হবে না জানিয়ে বলা হয়, ‘কথায় কথায় মেয়েরা মামলা করে, এদের প্রশ্রয় দেবেন না। তালেবান রাষ্ট্র নেয়ার পর নারী অধিকার খর্ব করা হবে। বেপরোয়াভাবে নারীরা চলতে পারবে না।’
জয়পুরহাট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল এ বিষয়ে বলেন, ‘তালেবান সংগঠনের নামে জয়পুরহাটের বিচারককে হুমকি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। যারাই এই চেষ্টা করবে তারাই এই দেশে টিকে থাকতে পারবে না।’
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
‘এ বিষয়ে রাতেই জয়পুরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে দোষীদের খুব শিগগির খুঁজে বের করা হবে।’