বঙ্গোপসাগরে ২৪ ঘণ্টায় ধরা পড়েছে ১৫টি সেইল ফিস বা পাখি মাছ। সমুদ্রের সবচেয়ে দ্রুতগতির মাছ এগুলো।
পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য বন্দরের মেসার্স এমকে ফিশ নামের একটি আড়তে শুক্রবার দুপুরে পাঁচটি মাছ বিক্রি করতে আনেন কালাম উল্লাহ নামের এক জেলে।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সাগরে মাছ শিকারে গেলে তার জালে পাঁচটি পাখি মাছ ধরা পড়ে। এর মধ্যে তিনটি মাছের ওজন ৬০ কেজি এবং অন্য দুটির ওজন ৪০ ও চার কেজি।
একই দিন মো. সোবাহান নামের এক জেলে আনেন আরও দুটি পাখি মাছ আনেন, যার একটির ওজন ৬০ কেজি এবং অপরটির তিন কেজির মতো।
বৃহস্পতিবার বিকেলে একই বন্দরে এ রকম আটটি পাখি মাছ বিক্রি করতে আনেন মো. নুরুন্নবী নামের এক জেলে।
তিনি জানান, বুধবার রাতে বঙ্গোপসাগরের বয়া সংলগ্ন এলাকায় তার জালে মাছগুলো ধরা পড়ে। মাছগুলোর ওজন ৪০ থেকে ৬০ কেজি। বৃহস্পতিবার বিকেলে মহিপুর মৎস্য বন্দরের আড়ত পট্টিতে মাছগুলো বিক্রির জন্য আনেন। এ সময় মাছগুলো এক নজর দেখতে ভিড় জমায় স্থানীয়রা।
বঙ্গোপোসাগরে সাত দিনে ধরা পড়েছে ১৭টি সেইল ফিশ যা স্থানীয়ভাবে পাখি মাছ নামে পরিচিত। ছবি: নিউজবাংলানুরুন্নবী আরও জানান, ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২ ফুট প্রস্থের তিনটিসহ সব মাছ ট্রলারে তুলতে বেগ পেতে হয়েছে।
গত ২০ আগস্ট পটুয়াখালীর গলাচিপার জেলেদের জালে বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ে প্রায় ১০০ কেজি ওজনের দুটি পাখি মাছ। পরে সেগুলো গলাচিপা উপজেলার মৎস আড়তে বিক্রি করা হয়।
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশালের সাস্টেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের উপপ্রকল্প পরিচালক কামরুল ইসলাম জানান, মাছগুলোর ইংরেজি নাম সেইল ফিস। এর বৈজ্ঞানিক নাম ইসটিওফোরাস প্লাটিপ্টেরাস। এগুলো সমুদ্রের সবচেয়ে দ্রুতগামী মাছ। ঘণ্টায় ৬৮ মাইল গতিতে ছুটতে পারে এরা। মাংসাশী এই মাছগুলো লম্বায় ৬ থেকে ১১ ফুট এবং ওজন ৫৪ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, সেইল ফিসের পেটের নীচের অংশ সাদা, নীল বা ধূসর রঙের হয়। এদের দেহের দর্শনীয় পিঠের পাখনা (ডোরসাল)। পাখনাটি গোল পাতা আকৃতির হওয়ায় স্থানীয়রা এটিকে গোল পাতা মাছ বা পাখি মাছ নামে ডাকে। এদের দেহ পাতলা ও লম্বাটে।
কামরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি দেশের জলসীমায় সেইল ফিস ব্যাপকভাবে ধরা পড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। এটি মৎস্য বিভাগের জন্য সন্তোষজনক। সাগরে ৬৫ দিনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতির বা সাগরের জলজ প্রাণির জীববৈচিত্রের উন্নয়ন হয়েছে। সেইল ফিস দিয়ে আগে শুটকি করা হতো। বর্তমান সময়ে শুটকি করা ছাড়াই বাজারে বিক্রি বাড়ছে।
কুয়াকাটার জেলে আবদুর সত্তার মিয়া বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগে আমাগো জালে এ রহম মাছ ধরা পড়ছিল। মাঝখানে অনেকের কাছে হুনছি যে মেলা জাগায় এ রহম মাছ ধরা পড়ছে, কিন্তু মোগো এই এলাকায় অনেক দিন পর এই পাখি মাছ ধরা পড়ল। মাছ গুলান দেখতেও ভালো, খাইতেও মজা।’
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ জানান, এসব মাছ খেতে সুস্বাদু হওয়ায় চট্টগ্রামসহ অনেক স্থানে বেশ কদর রয়েছে।
তিনি জানান, এর আগে বরগুনার পাথরঘাটা এবং পটুয়াখালীর গলাচিপায় একই জাতের আরও বেশ কয়েকটি মাছ ধরা পড়েছিল।
তিনি বলেন, ‘এই মাছ বিরল প্রজাতির না। আমরা চাই এ রকম সামুদ্রিক মাছ আরও বেশি ধরা পড়ুক। সাগর বলতেই যে শুধু ইলিশ, সেই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’