ঢাকার আফগান দূতাবাসকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করে যেতে বলেছে তালেবান। কোনো ভয় ও আতঙ্কের কাছে নিজেকে অহেতুক ছেড়ে না দিয়ে পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মাতৃভূমির সেবা করতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
এই নির্দেশনায় বিস্মিত এক কূটনীতিক নিউজবাংলাকে বলেছেন, এটি কোনো ধোঁকা কি না, সেটি তারা বোঝার চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক আফগান কূটনীতিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদেরকে দেশের স্বার্থে কাজ করতে বলা হয়েছে। আগের সরকারের সঙ্গে কাজ করায় কোনো প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার শিকার হতে হবে না বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।’
আফগান দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তালেবানের এমন আচরণ বিস্ময়কর এবং একেবারেই নতুন। বিশেষ করে বালক-বালিকাদের পড়াশোনা ও নারীদের পড়ালেখা ও কাজের সুযোগ সম্পর্কে দেয়া তাদের ঘোষণা সত্যিই চমকে দেয়ার মতো।’
কাবুল বিমানবন্দরে দুটি বিস্ফোরণে ২৮ তালেবান নিহতের দাবি করে গোষ্ঠীটি। ছবি: এএফপি
তালেবানের ঘোষণা আর কাজে এই ভিন্নতার কারণে ঢাকায় আফগান দূতাবাসের ওই কর্মীর মনেও সংশয় আছে। তাদেরকে দেয়া নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা বিশ্ববাসীর জন্য তালেবানের ধোঁকা কি না এটা সময় নিয়ে বুঝতে হবে। তবে বহির্বিশ্বে থাকা মিশনগুলোতে দেয়া এবারের তালেবানের বার্তা আগেরবারের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও চমকে দেয়ার মতো।’
দেশে থাকা স্বজনদের নিয়ে আতঙ্কে আছেন জানিয়ে তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।
গত ১৫ আগস্ট কাবুলে ঢোকে তালেবান। সরকারি বাহিনী যুদ্ধ না করে রাজধানী উগ্রপন্থি ধর্মীয় গোষ্ঠীটির হাতে তুলে দেয়। দেশ ছেড়ে লাপাত্তা হয়ে যান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি।
তালেবান ৯০ দশকের শেষ ভাগেও কাবুলের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিল। সে সময় তাদের কট্টর শাসনে অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ মানুষ। নারীদের চাকরি, পড়াশোনা, একা বাইরে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল তাদের। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনীর অভিযানে কাবুল ছেড়ে যায় তারা।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালেবান যোদ্ধারা। ছবি: এএফপি
দুই দশক পরে তালেবান আবার আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রক হয়ে যাওয়ার পর আবার ৯০ দশকের সেই স্মৃতি ফিরে এসেছে। যদিও তাদের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে, এবার আর এতটা কট্টর হবে না তারা। নারীদের সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বানও জানানো হয় শুরুতে।
তবে তালেবানের এই নমনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, কর্মজীবী নারীদের তারা এখন ঘরে থাকতে বলছে।
কেবল নারী ইস্যু নয়, ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করার পর আগের সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের খুঁজতে ঘরে ঘরে অভিযানের তথ্যও এসেছে।