টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট উপজেলার ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় পানি গড়াচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামে। এরই মধ্যে ৩৭০ হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
বুধবার বিকেল থেকে টানা বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল শুরু হয়। এতে ধোবাউড়া উপজেলার গামারীতলা ও পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলায় ঢলের পানি গড়াচ্ছে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। অব্যাহত ঢলের কারণে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ভালুকাপাড়া গ্রামের কৃষক আহাম্মদ আলী বলেন, ‘১১ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করছিলাম। হঠাৎ পানিতে সব তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চারা পচে নষ্ট হবে।’
গলইভাঙা গ্রামের মাছচাষি শামীম আহমেদ বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যেই হুহু করে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করে। আমার কয়েকটি পুকুর থেকে বহু মাছ ভেসে গেছে।’
গামারীতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘আগের বন্যায় উপজেলার কয়েকটি স্থানে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় পানি বেড়ে ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের লোকজনকে সহায়তা করা হবে।’
এ ছাড়া হালুয়াঘাটের ভুবনকুড়া, গাজীরভিটা, নড়াইল, কৈচাপুর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফসলি জমি, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। উপজেলাটির ২৫০ হেক্টর আমন ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
ভুবনকুড়া ইউনিয়নের কৃষক সামাদ মিয়া, ফরিদ মিয়া ও আফজাল জানান, এবারও বন্যা হলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। এবার তারা ধারদেনা করে ফসল আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার তুষার বলেন, পানিতে অন্তত ১২০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানি না কমলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ২৫০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হলেও ফসলের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না। কারণ কয়েক দিন বৃষ্টি না হলেই পানি কমে যাবে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফিকুজ্জামান বলেন, প্লাবিত গ্রামগুলোর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে বড় কোনো ক্ষতি এখনও হয়নি।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম বলেন, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে পানি কমতে শুরু করেছে।
এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট উপজেলার অন্তত ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়। হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটায়। তখন ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়।