বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাছ পাকা আম মিলবে সেপ্টেম্বরেও

  •    
  • ২৭ আগস্ট, ২০২১ ১৮:৫৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া আমের জাতটি নিয়ে অভিভূত হর্টিকালচার সেন্টারের বিজ্ঞানীরাও। দুই বছর ধরে জাতটি পর্যবেক্ষণ করে এখন সম্প্রসারণে আগ্রহী তারা। নাবি জাত হিসেবে আমটি মুক্তায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

মৌসুমের শুরুতে দেশে নানা জাতের আম পাওয়া গেলেও শেষে এসে তা হয়ে যায় হাতে গোনা। আমের প্রচলিত জাতগুলোর মধ্যে আশ্বিনা পাকে সবার শেষে। আগস্টে পাকা শুরু করা আমের জাতটির মাধ্যমেই এতদিন শেষ হতো গ্রীষ্মের সুমিষ্ট এ ফলের মৌসুম।

আমপ্রেমীদের আক্ষেপ, মৌসুমের শেষ সময়ে আশ্বিনার পাশাপাশি আরও কয়েকটি জাত থাকলে মন্দ হতো না।

প্রকৃতিই যেন আমপ্রেমীদের সেই ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছে। দেশে প্রাকৃতিকভাবেই হওয়া নাবি জাতের একটি আমের সন্ধান পেয়েছেন কৃষি গবেষকরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া আমের জাতটি নিয়ে অভিভূত হর্টিকালচার সেন্টারের বিজ্ঞানীরাও। দুই বছর ধরে জাতটি পর্যবেক্ষণ করে এখন সম্প্রসারণে আগ্রহী তারা। নাবি জাত হিসেবে আমটি মুক্তায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

যেভাবে পাওয়া গেল আমের নতুন জাতটি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বেলাল বাজারে পারিবারিক বাগান রয়েছে আতিকুল ইসলাম আরমানের বাবা ও চাচাদের। প্রতিবছর বাগানে মুকুল আসলে আম ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিতেন তারা। তাদের বাগানে বিভিন্ন জাতের আমগাছের পাশাপাশি পাঁচটি গাছ ছিল গুটি জাতের।

গাছগুলো তারা একই ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় দাদার ভিটামাটিতে থাকা একটি আমের গাছ (মাতৃগাছ) থেকে তৈরি করেন। ইচ্ছা ছিল গাছগুলো একটু বড় হলে, প্রচলিত আশ্বিনা বা অন্য কোনো জাতের কলম করে নেবেন। তবে গাছগুলোর আমের আকার ও স্বাদ ভালো হওয়ায় আর অন্য কোনো জাতে পরিবর্তন করা হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাকৃতিকভাবেই হওয়া নাবি জাতের একটি আমের সন্ধান পেয়েছেন কৃষি গবেষকরা। ছবি: নিউজবাংলা

সাধারণত ল্যাংড়া বা ফজলি আম পাড়ার সময়ই ওই পাঁচটি গাছের আম পাড়া হতো। তবে আমগুলো কাঁচাই থাকত, কারণ যারা বাগান কিনতেন তারা মাত্র পাঁচটি গাছের জন্য আলাদা শ্রম দিতে না চাওয়ায় আগেই আম পেড়ে নিতেন।

২০১৬ সালের দিকে আরমান নিজেই আমের ব্যবসা শুরু করেন। সে বছর তিনি পাশের একটি আশ্বিনা বাগানও কিনে নেন। তাই মৌসুমের শেষ পর্যন্ত চলে তার আম বেচা।

বাগানের অন্যসব জাতের আম পাড়া শেষ হলেও ওই পাঁচটি গাছের আম না পাকায় রেখে দেন আরমান। এতেই বের হয়, এটি নাবি জাতের আম।

আরমান বলেন, ‘যেহেতু পাশের আশ্বিনা বাগানের আম কেনা ছিল, তাই ওই পাঁচটা গাছের আম পাকা দেখা দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। যখন আমার মনে হয়েছে আমটা টেকসই, লেটে পাকে, তখন পরে পাড়ছি।’

২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাছে আম রেখেছিলেন জানিয়ে তিনি জানান, আরও কিছুদিন গাছে আম রাখা যেত।

ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এ আমের কথা ২০১৮ সালের দিকে প্রথম জানতে পারেন চৌডালা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম। তিনি নিজেই আমটি সেই মৌসুমে পর্যবেক্ষণ করেন।

পরের মৌসুমে তিনি বিষয়টি তার অফিসের তৎকালীন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে জানান। কিছুদিনের মাথায় হাবিবুল্লাহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে উদ্যানতত্ত্ববিদ হিসেবে বদলি হলেও গাছগুলো পর্যবেক্ষণে রাখেন।

হাবিবুল্লাহ জানান, হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে তারা আমের নাবি ও আগাম জাত খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। গোমস্তাপুরের বাগানের গাছগুলো দুই বছর পর্যবেক্ষণ করে আমটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি নাবি জাতের, সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এ আম গাছে রাখা যায়। এর গড় ওজন ৪২৭ গ্রাম। মিষ্টতা বা টিএসএস শতকরা ২১-২২ ভাগ। পাকলে হালকা হলুদাভ রং ধারণ করে এবং সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘আমরা এর আগে নাবি জাত হিসেবে গৌড়মতি মুক্তায়িত করেছিলাম। আমাদের সন্ধান পাওয়া এই গুটি আমটি গত বছর ও এ বছর পর্যবেক্ষণ করেছি। এর মিষ্টতা গৌড়মতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমটির আলাদা বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের আকৃষ্ট করেছে। নাবি জাত হিসাবে আমটি সম্ভাবনাময়।’

আমের নাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ইলা মিত্র অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ অঞ্চলেই আমরা আমটির সন্ধান পেয়েছি। তাই আমরা চিন্তাভাবনা করছি, কৃষকদের প্রতি ইলা মিত্রের সেই ত্যাগ ও ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমটির নাম ‘ইলামতি’ করার।

নাচোলে গড়ে উঠেছে বাগান

নতুন জাতটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না পেলেও আমটির ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে বাগান থেকে ডগা নিয়ে কয়েক বছর আগে নাচোলের কসবা ইউনিয়নে একটি বাগান করেছেন জালাল নামে একজন। তার বাগানে এখন ১৮০টি গাছ আছে।

সম্প্রতি ওই বাগানে সেখানে দেখা যায়, থোকায় থোকায় ঝুলছে আম।

ওই বাগানের আম এবার কিনেছেন মোহাম্মদ বাদশা নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, তিনি পাইকারিতে ৮ হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, ‘এত শেষ দিকে কোনো গুটি আম নেই। তাই ভালো দাম পাচ্ছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর