যানজটে ত্যক্ত-বিরক্ত রাজধানীবাসীর মেট্রোরেলের অপেক্ষার প্রহর ফুরাতে চলল। প্রথমে উত্তরা থেকে মিরপুর পর্যন্ত যে লাইনে যাত্রী নিয়ে ছুটবে এই ট্রেন, সেই লাইনে প্রথমবারের মতো নামল দ্রুতগতির বাহনটি।
তবে এতে কোনো যাত্রী ছিল না। রোববার টেস্ট রান বা পরীক্ষামূলক চলাচল হবে এই লাইনে। তার দুই দিন আগে সেই রেস্ট রানের পরীক্ষা হয়ে গেল।
মিরপুরের যে এলাকা দিয়ে উড়াল লাইনটি স্থাপন করা হয়েছে, তার আশপাশের বাড়ির বাসিন্দারা এই ট্রেন দেখে উৎফুল্ল। তারা ছবি ও ভিডিও তুলে ফেসবুকে শেয়ার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
কদিন পর যে ট্রেনে চড়ে তারা দুঃসহ যানজটের অভিজ্ঞতা ভুলে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছবেন, সেটি প্রথম দেখার আনন্দটাই আলাদা।
শুক্রবার সকালে মেট্রোরেল ৬টি বগি নিয়ে মিরপুর পর্যন্ত চারটি স্টেশনে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করে।
তবে ঢাকা মেট্রোরেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা আফতাব মাহমুদ গালিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ কোনো ধরনের টেস্ট ড্রাইভ বা মেট্রোরেল চলেনি। কোনো ট্রায়ালও হয়নি। মন্ত্রী মহোদয় পারফরম্যান্স টেস্টের সূচনা করবেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে মেট্রোরেল চলার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। যারা এমন পোস্ট করেছে তাদের থেকে শুনে নিতে হবে।’
জনসংযোগ কর্মকর্তা কিছু জানাতে না পারলেও মেট্রোরেল প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার পারফরম্যান্স টেস্টের আগে চালিয়ে দেখে নেয়া হচ্ছে। সেখানে যেন কোনো ত্রুটি না থাকে, তারই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল এই রুটে চলাচল শুরু করেছে।
রোববার ডিপো থেকে শুরু করে যেসব স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে পারফরম্যান্স টেস্ট করা হবে। এ জন্য ট্রেনের লাইনের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশের কাজ প্রথমে শেষ হওয়ার কথা।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়। কিন্তু চলমান বৈশ্বিক মহামারির কারণে এখন সেই সময়সীমায় তা সম্ভব না-ও হতে পারে।
তবে টেস্ট রান মানেই যাত্রী চলাচল করবে, এমন নয়। এরপর কয়েকটি ধাপ পার হয়ে মূল চলাচলে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। কারণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতে কমপক্ষে এক বছর মানুষবিহীন ট্রায়ালে থাকতে হবে ট্রেনকে।
এরই মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ডিপোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। মিরপুর পর্যন্ত স্টেশনের কাজও এগিয়ে চলছে। এখন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে।
এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত থাকলেও নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের জুনের মধ্যেই পুরো মেট্রোরেলের কাজ শেষ করা হতে পারে বলে আশাবাদী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি- ডিএমটিসিএল।
এই প্রকল্প চালু হলে উত্তরা-মতিঝিল রুটে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার ও দিনে ৫ লাখ যাত্রী চলাচল করবে। মোট ১৬টি স্টেশনে থামবে ট্রেনগুলো।
উত্তরা-মতিঝিল রুট ছাড়াও ঢাকার যানজট নিরসন এবং দ্রুত ও আরামদায়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে আরও পাঁচটি রুটে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে ১২৮ কিলোমিটারের নেটওয়ার্ক হবে মেট্রোরেলের।