ঢাকার সাভারে নারীর চুল কাটার ঘটনা খতিয়ে দেখতে গিয়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার রোষানলে পড়ার অভিযোগ করেছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা।
তবে পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন ওই নেতা। বলেন, অভিযোগকারীকে ফাঁসিয়ে ফায়দা নিতে চেয়েছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার রাতে পাল্টাপাল্টি এই অভিযোগ এসেছে জিরাবো এলাকা থেকে।
যারা অভিযোগ করেন তারা হলেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সফিউল্লাহ ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের ভুল-বোঝাবুঝি বলে জানায়। সেই সঙ্গে জানানো হয়, নারীর চুল কেটে দেয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
ওই নারীর স্বামী মো. নীরব নিউজবাংলাকে জানান, তিন বছর আগে স্ত্রী শাহানাজকে সঙ্গে নিয়ে জিরাবো ছেড়ে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায় চলে যান। তখন লাকী বেগম নামে এক দোকানির কাছে তাদের প্রায় ১০ হাজার টাকা বকেয়া ছিল। তার স্ত্রী একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় আসেন।
২৬ আগস্ট সকালে কাজে গেলে লাকী তাকে তার বাসায় নিয়ে যান। এরপর তার স্ত্রীকে মারধর করে ও চুল কেটে দেন। পরে এ ঘটনা তার স্ত্রী তাকে ফোন করে জানান। রাতে পুলিশ সেখানে গিয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হালিম ভূঁইয়া জানান, বিকেলে ওই নারী বিচার চাইতে মজিবর রহমানের কাছে গেলে বিষয়টি পুলিশকে জানান তিনি। রাতে পুলিশ এসে ঘটনার তদন্ত শেষে শাহানাজকে থানায় নেয়ার কথা বললে নেতার লোকজন বাধা দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি (পুলিশ) অভিযোগকারী নারীর ভিডিও করছে। পরে আমারে আইনা বহাইছে। মনে করছে, আমি ভয় পামু। সিস্টেম করমু। পোলাপান তহন ক্ষেইপা গেছিলোগা অনেক।’
পুলিশকে যেতে না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশরে আটকায় নাই। মানুষ জড়ো হইছে তাই যাইতে পারে নাই। আমিই ওসি (জিয়াউল ইসলাম) সাহেবরে ফোন দিছি। মানে আমি রাজনৈতিকভাবে এত ‘ই’ (প্রভাবশালী) এসআই এইটা মনে করে নাই। সে মনে করছে মজিবর ভাই নরমাল একজন পারসন।’’
অভিযোগের বিষয়ে এসআই সফিউল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত স্যারের নির্দেশে ফোর্সসহ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যাই। উপস্থিত লোকজনের সামনে অভিযোগকারীর কাছে ঘটনার বর্ণনা শুনি। জেরার সময় মজিবর নামে এক ব্যক্তি চুল কাটার ঘটনায় অন্য একজনকে ফাঁসানোর কথা শিখিয়ে দেন বলে জানান অভিযোগকারী।
‘ওই স্বীকারোক্তির কিছুটা ভিডিও করি। এরপর মজিবরকে বাড়ির সামনে বাজারে ডেকে পাঠাই। তাকে আমি চিনিও না। পরে তাকে আমার সঙ্গে থানায় আসতে বলি ওসি স্যারের কাছে। তখন কয়েকজন আমাকে বাধা দেয়, খারাপ আচরণ ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্সসহ সিনিয়ররা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।’
ঢাকা জেলা উত্তর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ হিল কাফি নিউজবাংলাকে বলেন, ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পুলিশের ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। তবে বকেয়া টাকা ফেরত না দেয়ায় অভিযোগকারী নারীর চুল কেটে দেয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দোকানিকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।