বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজধানীতেই ‘সবচেয়ে দুর্বল’ আওয়ামী লীগ

  •    
  • ২৭ আগস্ট, ২০২১ ১৫:৫৯

২০১৬ সাল থেকে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মহানগরে নতুন নেতৃত্ব এলেও সেগুলো আর পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আর এ কারণে মহানগরের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে হতাশা। দলীয় কাজে উৎসাহ হারিয়েছেন অনেকে। এর ফলে দলের সাংগঠনিক ভিত দুর্বল হয়েছে রাজধানীতে। নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্বও ক্রমেই বাড়ছে।

যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই রাজধানী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে রাজধানীর নেতা-কর্মীদের শক্তির ওপরই নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলো।

করোনায় দীর্ঘদিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় তৃণমূলের ভিত দুর্বল হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। সব বিভাগের কার্যক্রমেই রয়েছে স্থবিরতা। তবে নেতা-কর্মীরা বলছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ঢাকা মহানগরীর।

দফায় দফায় ঘোষণা দিয়েও মহানগরীর ওয়ার্ডগুলোতে কোনো কমিটি এখনও দেয়া যায়নি। কমিটি দিতে ঢাকা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বর্ধিত সভা করলেও কোনো ফল নেই।

সবশেষ বর্ধিত সভায় মির্জা আজম উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে দুর্বল সংগঠন ঢাকা মহানগর। কোনো চর্চা না থাকায় মহানগরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের জড়তা চলে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি এটা সচল করতে।

‘ঢাকা মহানগর উত্তর মোটামুটি সচল থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ। আমার চেষ্টা দুটি ইউনিটকেই সমান্তরালভাবে এগিয়ে নেয়ার।’

২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সংসদ। এতে বজলুর রহমানকে সভাপতি ও এস এম মান্নান কচিকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। এ ছাড়া আবু আহমেদ মন্নাফীকে সভাপতি এবং মো. হুমায়ুন কবিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়।

পরের বছরের সেপ্টেম্বরে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রে জমা দেন। ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে ঢাকা উত্তরের জন্য ৯২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর এক দিন পরেই ৭৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে দৃশ্যমান কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেই দলটির নেতা-কর্মীরা। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর দুটি ইউনিটেও। কমিটি থাকলেও করোনার কারণে সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম সেভাবে করার সুযোগ পাননি নতুন দায়িত্ব পাওয়া নেতারা।

কেন্দ্রের নির্দেশে করোনার সময় মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সাংগঠনিক কাজে গতি আসেনি। সম্প্রতি ওয়ার্ড কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে কয়েকটি সাংগঠনিক দল তৈরি করে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ কমানোর।

২০১৬ সাল থেকে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মহানগরে নতুন নেতৃত্ব এলেও সেইগুলো আর পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আর এ কারণে মহানগরের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে হতাশা। দলীয় কাজে উৎসাহ হারিয়েছেন অনেকে। এর ফলে দলের সাংগঠনিক ভিত দুর্বল হয়েছে রাজধানীতে। নেতাদের সাথে কর্মীদের দূরত্বও ক্রমেই বাড়ছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক টিম করে দেয়া হয়েছে, তারা কাজ করছে। আগস্টের কাজই আমরা শেষ করতে পারছি না। প্রতিদিনই চারটা-পাঁচটা করে অনুষ্ঠান থাকে। আওয়ামী লীগের রীতি অনুযায়ী আগস্ট মাসে কোনো কমিটির কাজ করা হয় না। এরপরেও সাংগঠনিক টিমগুলো ওয়ার্ড ইউনিটে কর্মিসভা করছে। সচেতন করছে, যাতে ভালো মানুষদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা যায়।

‘মন্দ লোক যেমন চাঁদাবাজ বা দখলবাজরা যাতে না আসে, সে বিষয়ে নেতা-কর্মীদের বলা হচ্ছে। এই মাসটা শেষ হলে সদস্য বই নেতা-কর্মীদের দিয়ে দেব। এরপর আশা করি, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। আস্তে আস্তে কাজ হবে। এটা তো এক দিনে হবে না। যেহেতু বড় দল, তাই আমরা এখানে যেন বিতর্কিতরা আসতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্কতার সাথে সামনে এগোচ্ছি।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম তখনই শুরু করব, যখন করোনার প্রকোপ কমে আসবে। এ দেশের মানুষের সেবা করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখে সম্মেলন স্থগিত করে দিতে। আগস্ট মাসে আমরা এমনিতেই সম্মেলন করি না, তার ওপর করোনা, তাই প্রশ্নই আসে না।

‘আমরা এখন মানবিক কার্যক্রমকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। হাজার হাজার মানুষকে আমরা প্রতিদিনই খাবার দিচ্ছি। তাদের সহযোগিতা করছি। যখন করোনা মোটামুটিভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, তখনই আমরা সাংগঠনিক সম্মেলন করব। এর আগে না। এখন মানুষের সেবাই আমরা করে যাব। সেটাই আমরা প্রতিদিন ওয়ার্ডভিত্তিক করে যাচ্ছি।’

কোন বিভাগের অবস্থা কী?

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সব থানায় সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশে করোনা শুরুর পর থেকে ঢাকা ছাড়াও অন্য বিভাগগুলোতে চলছে সাংগঠনিক স্থবিরতা। এর ফলে জেলায় জেলায় দেখা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, যা সামাল দেয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

জেলা-উপজেলার অনেক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি হচ্ছে না। যেগুলোর সম্মেলন এরই মধ্যে হয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলোই এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

এরই মধ্যে নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নেতা-কর্মীদের মতবিরোধ সামনে এসেছে। নোয়াখালী জেলার নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জার নানা বক্তব্যে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। জেলা নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের দফায় দফায় বৈঠকেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন ইস্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব ঠেকাতে ব্যর্থতার বিষয়টিও সামনে এসেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা হলেও কোনো নেতা-কর্মীকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

সিলেট বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলন এখনও বাকি রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।

দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত দেড় বছরে রাজশাহী বিভাগের তিনটি জেলা ও ২৭টি উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। এর মধ্যে কোথাও ভোটের মাধ্যমে, কোথাও বা সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে নেতৃত্ব। তবে এখনও বাকি রয়েছে সিরাজগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ ও পাবনায় জেলা সম্মেলন।

খুলনা বিভাগের সাতটি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। এখনও বাকি আছে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের সম্মেলন। এরই মধ্যে ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নগুলোতে সম্মেলনের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্র।

রংপুর বিভাগের ছয়টি জেলা রংপুর জেলা ও মহানগর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সরাসরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলাগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগে সম্মেলন বাকি আছে সাতটি জেলার। এ বিভাগে সম্মেলনের অপেক্ষায় আছে ৭০টি উপজেলা, থানা ও সদর-পৌরসভা।

ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি জেলা ইউনিটের সবগুলোরই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। করোনার কারণে জেলাগুলোতে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়নি।

বরিশাল বিভাগের বরগুনা ও পিরোজপুরে সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হলেও করোনার কারণে থমকে আছে কাজ। নেতা-কর্মীরা বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে।

কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, করোনার প্রকোপ কমলে আবারও সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করবে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি আগে থেকে দেয়াই আছে, প্যানডেমিকের প্রকোপ কমে গেলেই আমরা সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করব।

‘এখন তো তারিখ ঠিক করা যাচ্ছে না। এটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। আমাদের সিদ্ধান্ত প্রকোপ কমলেই আমরা কার্যক্রম শুরু করব। সবকিছু স্বাভাবিক হলে আমাদেরও কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর