করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কঠিন সময়টা পেরিয়ে এসেছে বলেই দৃশ্যত মনে করা হচ্ছে। মৃত্যু ও শনাক্ত কমার পাশাপাশি রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমেছে। একইসঙ্গে চাহিদা কমেছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ)।
ঢাকার হাসপাতালগুলোর ৪৮ শতাংশ আইসিইউ শয্যা এখন ফাঁকা। অন্যদিকে ৬২ শতাংশ করোনা শয্যা এখন খালি পড়ে আছে।
দুই সপ্তাহ আগে ঢাকার সরকারি-বেসরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালোর সাধারণ শয্যায় যেখানে ৩ হাজার ৭১৮ রোগী ভর্তি ছিল, বৃহস্পতিবার সেটি কমে ২ হাজার ৩৪৫ হয়েছে।
এক সময় আইসিইউর জন্য হাহাকার ছিল। আইসিইউ সংকটের কারণে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগী নিয়ে স্বজনদের ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। তবে সেই চাহিদা এখন আর নেই। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ৪১২টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১২ আগস্টের তুলেনায় ২৬ আগস্ট এসব হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মোট সংখ্যা দ্রুত কমে আসায় হাসপাতালগুলোর সংকট অনেকটা কেটে গেছে।
দীর্ঘদিনের লকডাউন ও বিধিনিষেধ সংক্রমণ কমাতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা।
করোনা ইউনিটে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ফাইল ছবি
রোগী কমে আসার চিত্র রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে চোখে পড়ে। এই হাসপাতালে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি আধা ঘণ্টায় চার থেকে পাঁচটি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স চোখে পড়ত। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় সেখানে গেলে পাওয়া যায় ভিন্ন চিত্র। হাসপাতালের কাউন্টার, অবজারভেশন কক্ষে ছিল নিরবতা।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহে প্রায় তিনশ রোগী কমে গেছে। ১২ আগস্ট হাসপাতালে ৫১৪ জন রোগী ভর্তি থাকলেও সেটি এখন ২২১ জনে নেমে এসেছে।
‘একই সঙ্গে আইসিইউ চাহিদা কমে এসেছে। দুই সপ্তাহ আগে এ হাসপাতালে ২১২টি আইসিইউর মধ্যে সবগুলোতে রোগী ভর্তি ছিল। তবে এখন আইসিউতে ১৭৩টি শয্যায় রোগী ভর্তি।
‘এই ধারা অব্যাহত থাকলে এটি আমাদের জন্য অবশ্যই স্বস্তির খবর। এই সংক্রমণ কমতির ধারা অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
সুস্থ হয়ে রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছেন এক রোগী। ফাইল ছবি
পরিচালক বলেন, ‘সংক্রমণ কমে আসছে দীর্ঘদিন ধরে চলা লকডাউন ও বিধিনিষেধের কারণে। এ সময় সবাই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেছে। এ কারণে সংক্রমণ কিছু কমে এসছে। তবে আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানি, তাহলে সংক্রমণ আবার বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউ চলে আসছে। অনেক দেশে আসার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আবার হয়তো সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ জন্য সবাইকে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। এমনকি টিকা নেয়ার সুযোগ থাকলে টিকা নিতে হবে। দুই সপ্তাহ আগে দিনরাত ফোন আসত আইসিইউর অনুরোধের জন্য, তবে এখন সেটা অনেক কমে এসেছে। রাত ১২টা-১টা, ভোর চারটার সময়ও ফোন আসত। এখন কিন্তু এখন অনেক কমে এসেছে।’
হাসপাতালের পরিচালক জানান, আইসিইউর চাহিদা কমায় এখন সাধারণ করোনা রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ামাত্র তারা আইসিইউতে নিতে পারছেন। গোটা হাসপাতাল এখন কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের আওতায় আনা হয়েছে। ফলে এখন প্রতিটি রোগীর জন্য অক্সিজেন সুবিধা আছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) করোনা ইউনিটেও এখন প্রায় অর্ধেক শয্যা ফাঁকা। আইসিইউও ফাঁকা। এই হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমে আসায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে হাসপাতালে। আইসিইউ চাহিদা কমতির দিকে।’
হাসপাতালের পরিচালক বলেন, জটিল রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। দুই সপ্তাহে রোগী কিছুটা কমে এসেছে। এ হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ৮৭ জন। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৩৫ জন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮৪৫ শয্যার মধ্যে দুই সপ্তাহ আগেই ১৪৮টি শয্যা ফাঁকা ছিল। তবে বর্তমানে ৩০২ শয্যা ফাঁকা আছে। আস্তে আস্তে অনেক চাপ কমে আসছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা একটু কমেছে। তখন ঢাকা ও বাইরের জেলা থেকে আসা রোগীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আবার অনেক রোগীকে বাসায় রেখে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। কারণ তাদেরকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন হয় না।’