রাজধানীর নয়াটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পা রাখতেই বোঝা গেল কর্মব্যস্ত সবাই। ঝাড়পোছ, পানি ছিটানো, জীবাণুনাশক ছিটিয়ে শ্রেণিকক্ষগুলো করা হচ্ছে পাঠদানের উপযোগী। সরকার বলছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে খুলবে বিদ্যালয়, শুরু হবে পাঠদান।
হুট করে বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা এলে যাতে কোনো তড়িঘড়ি না হয়, সে জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ।
এই দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শ্রেণিকক্ষগুলো পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ধুলাবালি আর মাকড়শার জালে ছেয়ে গেছে শ্রেণিকক্ষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসবাবপত্র অযত্ন-অবহেলায় অকেজো হয়ে পড়েছে।
বাইরেও চিত্রটা এমন। শ্যাওলা জমে বারান্দাগুলো হয়েছে হাঁটার অনুপযোগী। মাঠে বর্ষার পানি পেয়ে লম্বা হয়েছে ঘাস, জমেছে আগাছা।
সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে স্কুল খুলে দেয়ার ইঙ্গিত মিলতেই শুরু হয়েছে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান উপযোগী করার কাজ।
সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই হাতে সময় নেই খুব একটা। সরকারের নির্দেশনা মিলতেই নিয়মিত অফিস করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
নয়াটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছুটিতে থাকায় চলতি দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক কানিজ ফাতেমা। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই সব শিক্ষক নিয়মিত অফিস করছেন। এ ছাড়া করোনার সময় শিক্ষকরা হোম ভিজিট, শিট বিতরণসহ নানা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।’
সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেয়েই বিদ্যালয়ের অফিস খোলা হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা আসামাত্র যেন স্কুল চালু করা যায়, সে জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
একই চিত্র বিরাজ করছিল রাজধানীর মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। দেখা গেল, এই করোনা মহামারির মধ্যে কীভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস চালু করা যায়, তা নিয়ে বৈঠকে বসেছেন তারা।
তাদের বৈঠকের মধ্যেই তদারকিতে আসেন থানা শিক্ষা কর্মকর্তা। সার্বিক বিষয়ে বিদ্যালয় প্রধানকে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন তিনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুন নাহার বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বিদ্যালয়ে এসে অনলাইনে চলমান ক্লাসগুলো তদারকি করা হয়। এ ছাড়া রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে ওয়ার্কশিট প্রদান, শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের হোম ওয়ার্ক দিয়ে আসেন।’
আগে দেয়া হোম ওয়ার্ক সংগ্রহ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অগ্রগতি কেমন হচ্ছে তাও শিক্ষকরা পর্যালোচনা করছেন বলে জানান তিনি।
ব্যতিক্রম নয় রাজধানীর আরেক প্রান্তে থাকা আগারগাঁও তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্রও।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আমজাদ মিয়া বলেন, ‘স্কুল চালুর সিদ্ধান্ত এলে আমরা যেন বিদ্যালয় খুলে দিতে পারি, সে জন্য প্রতিদিনই স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। আর রুটিন কাজগুলোও চলমান আছে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সহকারী উপজেলা ও থানা শিক্ষা অফিসারদের বিদ্যালয় পরিদর্শন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
বিদ্যালয়গুলোকে পাঠদানের জন্য উপযোগী করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। সরকার থেকে ঘোষণা আসামাত্রই বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।’
করোনার সংক্রমণের মধ্যেই ঢাকায় আবার তৈরি হয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। ফলে, বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হলে শিক্ষার্থীরা যাতে আক্রান্ত না হয়, সেদিকেও সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে এবং সে মোতাবেক কাজ চলছে।’
সরকারের দেয়া নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রণীত ওয়ার্ক শিটগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে শতভাগ বিতরণ করা হচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পাঠ অগ্রগতি নিয়ে ধারণা নেয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষকদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। হোম ভিজিট যাচাই করা এবং শিক্ষার্থী প্রোফাইল শতভাগ হয়েছে কি না তা দেখতে হবে।
দুর্বল শিক্ষার্থীদের করণীয় নির্ধারণের নির্দেশনাও দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া শিক্ষার্থীর বাড়ি যাওয়া এবং শিক্ষার্থী যোগাযোগ রেজিস্টার যাচাই করতেও বলা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘ওয়াশ ব্লক’ ঠিক করার জন্য দ্রুত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।