ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরিফে যাওয়ার জন্য বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি বাবা ছালেহ আহমেদ। পথে মুরাদপুরে নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন তিনি। এরপর কেটে গেছে ২৮ ঘণ্টা। কিন্তু কেউ তার সন্ধান দিতে পারছে না।
কথাগুলো বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসে মাহিনের। ১৮ বছরের এই তরুণ নিখোঁজ ছালেহ আহমেদের একমাত্র ছেলে। বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা অবস্থা তার।
নগরীর মুরাদপুরে বৃহস্পতিবার দুপুরে তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বাবাকে ফিরে পেতে সকাল সকাল চাচা মনিরের সঙ্গে ছুটে আসেন দুর্ঘটনাস্থলে।
মাহিন জানান, বাবা ছালেহ আহমেদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি নিজে পশ্চিম পটিয়া এ জে চৌধুরী ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। তার ছোট বোন জান্নাতুল মাওয়া মিতু পড়েন এ জে চৌধুরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। সংসারের খরচ মেটাতে তার বাবা নগরীর চকবাজারে একটি ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতেন। লকডাউনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাঝে মাঝে শহরে এসে তিনিও বাবাকে সাহায্য করতেন।
কিন্তু হঠাৎ নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন বাবা। এরপর কেটে গেছে ২৮ ঘণ্টার বেশি। কিন্তু সন্ধান মেলেনি তার।
এত বড় নালার মুখ খোলা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাহিন। বলেন, ‘নালা এভাবে উন্মুক্ত হলো কীভাবে। আমি বাবাকে এভাবে কেন হারাব। তাকে ফিরিয়ে দাও।’
নালায় পড়ে সবজি ব্যবসায়ী ছালেহ আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বুধবার মধ্যরাতে পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন তার ছোট ভাই মনির আহমেদ।
নিখোঁজ ব্যবসায়ী ছালেহ আহমেদের ছেলে মাহিনতিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ভাই খুব সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। বুধবার সকালে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরিফে যাওয়ার জন্য তিনি চকবাজারের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু আর দরবারেও যাওয়া হলো না, বাসায়ও ফিরলেন না। তার দুই সন্তান পড়াশোনা করে, এখন তাদের পড়াশোনা কীভাবে চলবে তাও চিন্তার বিষয়।’
বুধবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন ছালেহ আহমেদ। তাকে উদ্ধারে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুই দফায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস।
ছালেহ আহমেদের বাড়ি পটিয়া উপজেলার মনসা চৌমুহনী এলাকায়। তিনি নগরীর চকবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধ নালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অসাবধানতাবশত পড়ে নিখোঁজ হন তিনি।
ওই দিন রাত হয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। পরদিন বুধবার সকাল ৭টা থেকে উদ্ধার অভিযান ফের শুরু হয়।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিক আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় মরদেহ ভেসে উঠতে পারে। তাই ওই খালের যেসব জায়গায় আটকে থাকার সম্ভাবনা আছে, সেসব স্থানে সকাল ৭টা থেকে খোঁজ করা হচ্ছে।’
মুরাদপুর থেকে শমসেরপাড়া হয়ে কর্ণফুলীতে যাওয়া খালটির বিভিন্ন অংশে বুধবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল ও রেসকিউ দলের মোট ১২ জন সদস্য উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।