গাজীপুরের টঙ্গীর পর এবার কালিয়াকৈরের একটি কারখানায় টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অন্তত অর্ধশত শ্রমিক। এর পরপরই কারখানাটিতে বন্ধ করা হয়েছে টিকাদান কার্যক্রম।
উপজেলার মৌচাক এলাকার সাদমা গ্রুপের মৌচাক নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
তাদেরকে স্থানীয় পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী পোশাকশ্রমিক।
জেলা সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান এ তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সকালে ওই কারখানায় দেয়া হচ্ছিল সিনোফার্মের টিকার দ্বিতীয় ডোজ। সকাল ১০টার দিকে টিকা নেয়া কয়েকজন শ্রমিক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওই কারখানার টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়।
ওই কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, টিকা দেয়া শুরু করার প্রায় দুই ঘণ্টা পর থেকেই টিকা নেয়া শ্রমিকদের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ মাথা ঘুরিয়ে মেঝেতে পরে যান।
পপুলার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মেঝেতে ২৫-৩০ জন পোশাকশ্রমিক অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে আছেন। কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
শ্রমিকদের অসুস্থতার বিষয়ে পপুলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কথা বলেননি।
ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক আকলিমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক আছে। যারা আজ টিকা দিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা খুব চিন্তায় আছি। এ ঘটনার পরেই প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে মৌচাক নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ বক্তব্য দিতে চাননি।
সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে তাতে ৫৪ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সাইকোলজিক্যাল কোনো কারণে তারা অসুস্থ হতে পারেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সবাই সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।’
এর আগে মঙ্গল ও বুধবার টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকার শ্যাটার্ন টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় টিকা নেয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েকজন শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার দিনভর ওই কারখানায় প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিককে মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়। এদিন চার শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
বুধবার সকালে তারা কাজে যোগ দেন। কিন্তু এদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্য শ্রমিকরা। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে অসুস্থ শ্রমিকদের স্থানীয় ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ অবস্থায় মালিকপক্ষ বুধবার কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।
শ্যাটার্ন টেক্সটাইল লিমিটেডের মালিক আমানুল্লাহ চাকলাদার বলেন, ‘১৮ জুলাই শ্রমিকদের যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না কোম্পানির করোনা টিকা দেয়া হয়েছিল। গত মঙ্গলবার দেয়া হয় দ্বিতীয় ডোজ। টিকা দেয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই জ্বর, ব্যথাসহ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বুধবার কাজে যোগ দিয়ে কিছু শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে কারখানা ছুটি দিয়ে দিই।’
ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক মো. আনিস জানান, মঙ্গলবার কারখানার চারজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বুধবার আরও একজনকে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তাদের জ্বর ও শরীরে ব্যথা রয়েছে।