বেলা সাড়ে ১১টা। ফার্মগেট হলি ক্রস কলেজের গেটের সামনে একটি ব্যানার গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন। কাছে গিয়ে জানা যায়, রাখাল রাহা নামক এই ব্যক্তির অবস্থান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে।
রাখাল জানালেন, গত ২২ আগস্ট থেকেই প্রতিদিন নিয়ম করে হলি ক্রসের সামনে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে অবস্থান নেন তিনি। তার মেয়ে হলি ক্রস কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাই দাবি জানানোর জায়গা হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছেন।
তার গলায় ঝোলানো ‘শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন’-এর একটি ব্যানার। এতে লেখা, ‘প্রায় ৫৫০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দুনিয়ার কোনো সভ্য দেশ এটা করেনি। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা, হতাশা, নেশা ভয়াবহ। শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রায়।
‘বাংলাদেশ করোনায় কম আক্রান্ত একটি দেশ। বাবা-মাকে বাইরে যেতে হলে ঘরে শিশুদের ঝুঁকি কমে না। সব কিছু খোলা আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি কমানোর তামাশা বন্ধ করো! সবার শেষে বন্ধ এবং সবার আগে খোলা জাতিসংঘের এই নীতির ভিত্তিতে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দাও। শিক্ষা-শিক্ষার্থী-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাঁচাও।’
আপনি কি একাই এই অবস্থান নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রাখাল রাহা বলেন, ‘কখনও কখনও আমার সঙ্গে আরও অভিভাবকেরা যুক্ত হলেও বেশির ভাগ সময় আমি একাই দাঁড়াই।
‘একজন সাধারণ অভিভাবক হিসেবে আমার সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে যত দিন না খুলবে তত দিন হলি ক্রস কলেজের সামনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দাঁড়াব। আমার বাচ্চাসহ দেশের অন্য শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন বাসায় থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি থেকে মুক্তি পাক।’
রাখাল জানান, ইউনিসেফ ও ইউনেসকোর যৌথ বিবৃতিতে এসেছে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর মাত্র ১৯টি দেশ এভাবে একটানা স্কুল বন্ধ রেখেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে করোনা মহামারিতে সব কিছু কম বেশি খোলা রেখেছে, কিন্তু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা, এমনকি পাবলিক পরীক্ষা পর্যন্ত নেয়ার কথা চিন্তা করতে পারেনি। শিক্ষা ধ্বংস হচ্ছে এটা বলেই যথেষ্ট নয়, শিক্ষাকে পরিকল্পিতভাবে বহু বছর ধরে ধ্বংস করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে দফায় দফায় তা বাড়িয়ে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী বিশেষ করে শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন মনোচিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ভাষ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত বেশি সময় বন্ধ থাকবে, ততই বাড়বে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।