জাপানি মায়ের দুই সন্তান নিয়ে রিটের শুনানি থাকা অবস্থায় এবার আড়াই বছরের ছেলেশিশুকে তার ভারতীয় নাগরিক মায়ের জিম্মায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
ওই শিশুটির বাবা সপ্তাহে তিন দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিশুকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারবেন।
এ-সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে শিশুটির বাবা ব্যবসায়ী শাহীনুর টিআইএম নবীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মাসদু রেজা সোবহান। আর মা সাদিকা সাঈদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত শিশুকে মায়ের জিম্মায় দিয়েছে। বাবা সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুকে নিজের কাছে নিতে পারবেন। একই সঙ্গে মায়ের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা দিতে বলেছে আদালত।’
আদালতের নির্দেশে সকালে শিশুকে নিয়ে হাজির হন বাবা শাহীনুর নবী। এ সময় মাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত শিশুটির বাবা ও মায়ের বক্তব্য শোনে। পরে আদেশ দেন।
ঘটনা তুলে ধরে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ভারতের বিয়েসংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন বারিধারার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহীনুর নবী। মেয়েটিও হায়দরাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে তাদের ঘটা করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন ওই দম্পতি।
ফাওজিয়া করিম বলেন, ওই দম্পতির এক ছেলেসন্তান রয়েছে। করোনার সময় থেকে হঠাৎ করে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। সাদিকা সাঈদ শেখকে মারধরও করেন তার স্বামী। ভারতের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয়স্বজন জানতে পারেন।
এরপর ওই দেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও বিষয়টি সমাধান হয়নি।
পরে মেয়েটির বোন মানবাধিকার সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান। এর মধ্যে সাদিকাকে তালাক দিয়ে দেন স্বামী শাহীনুর নবী।
তখন বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট করা হলে আদালত শিশুকে নিয়ে হাজির হতে নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তারা বৃহস্পতিবার হাজির হন। পরে আদালত শুনানি নিয়ে দুই মাসের জন্য এ আদেশ দেয়।