কয়েক দফা পিছিয়ে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। নতুন তারিখ ঘোষণার পর ঝিমিয়ে পড়া নির্বাচনি এলাকা আবার চাঙা হয়ে উঠেছে, বেড়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমাগম। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের বাগ্যুদ্ধে মিলছে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস।
এই উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যােবহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লড়াইয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। এ ছাড়া ডাব প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের নেতা জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া।
শাটডাউন চলাকালে কিছুদিন প্রচার বন্ধ থাকলেও এখন আবার মাঠে নেমেছেন প্রধান তিন প্রার্থী। তবে জুনায়েদ মুহাম্মদকে দেখা যাচ্ছে না প্রচারে।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান বলেছেন, ভোট চোরদের প্রতিহত করতে সাধারণ জনগণ এবার কেন্দ্র পাহারা দেবে।
তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আতিকের শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আতিকের অভিযোগকে অমূলক আখ্যায়িত করে হাবিব বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত আতিকুর রহমান আতিক বা কোনো প্রার্থীর প্রচারে কেউ বাধা দেয়নি। তারা বরং নির্বাচনি বিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালাচ্ছেন।
দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময় সভায় গত ২২ আগস্ট আতিক বলেন, কোনো অপকৌশলেই লাঙ্গলের গণজোয়ার থামানো যাবে না। লাঙ্গলের পক্ষে এবার সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছে। হুমকি-ধমকিতে মানুষ ভয় পায় না, ভোট চোরদের প্রতিহত করতে এবার কেন্দ্র পাহারা দেবেন সাধারণ জনগণ।
তিনি বলেন, মানুষ এবার দল-মত ভুলে লাঙ্গলকে বিজয়ী করতে চায়। মানুষের এই গণজোয়ার ঠেকাতে যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, তা কাজে আসবে না।
এরপর মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দক্ষিণ সুরমার দাউদপুরে আয়োজিত আরেকটি মতবিনিময় সভায় একই সুরে বক্তব্য দেন আতিক।
সেখানে তিনি বলেন, লাঙলের জোয়ার দেখে একটি মহল ভয় পেয়েছে। তারা ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচনে জিততে চায়।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে আতিক বলেন, ‘একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে ভোটের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনুন। সামনে অনেক নির্বাচন আসছে। উপনির্বাচন সুষ্ঠু হলে সেসব নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে উৎসাহ পাবে।’
কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন সভায় এমন শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন তিনি। এই শঙ্কার ব্যাপারে জানতে বুধবার একাধিকবার আতিকুর রহমান আতিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আতিকের ব্যক্তিগত সহকারী কবির আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আতিক নির্বাচনি কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। ফোন তার কাছে নেই।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির একজন সহসভাপতি ও একজন সহসম্পাদকের সঙ্গে আলাপ হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রতিদিনই নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। কেবল আওয়ামী লীগের নয়, দলটির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারাও প্রতিদিন আসছেন।
তারা জানান, একটি উপনির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন তৎপরতা আগে কখনো দেখা যায়নি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এই উপনির্বাচনে যে কোনও মূল্যে জয়ী হতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া অতীতের নির্বাচনগুলোও এমন শঙ্কা জাগাচ্ছে।
উচ্চ আদালতের আদেশে ভোট স্থগিত হওয়ার আগে গত ২৫ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেও এমন অভিযোগ করেছিলেন আতিক। সেদিন তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশ প্রচারে বাধা দিচ্ছে, ভয় দেখানোর পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীও। তিনি বলেন, বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোর কারণেই জনমনে এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকেই এই শঙ্কা দূর করতে হবে।
তবে এমন শঙ্কা অমূলক দাবি করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরাও একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।
‘নৌকার পক্ষে জনমত দেখে আতিক খামাখা অভিযোগ করে যাচ্ছেন। তিনি জনগণের সঙ্গে নেই। শুধু অভিযোগ করায় আছেন।’
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, কোনো প্রার্থী সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
তফসিল ঘোষণার পর ৯০ দিন পেছালেও ২৮ জুলাই ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে ২৮ জুলাই অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার।