বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে কিছুদিন ধরে তুমুল আগ্রহের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও তাদের হিস্যা বাড়িয়ে চলছে। শুধু জুলাই মাসে তারা পুঁজিবাজার থেকে কিনেছে চার কোটির বেশি শেয়ার।
অথচ আগের মাস জুনে তারা বিক্রি করেছিল এক কোটি ৩০ লাখের বেশি শেয়ার।
সম্প্রতি কোম্পানিটি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে সুকুক বন্ড ছেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তোলার অনুমতি পেয়েছে। বন্ড কিনতে প্রথমে অগ্রাধিকার পেয়েছেন বিদ্যমান শেয়ারধারীরা। তবে তারা খুব একটা আগ্রহ দেখাননি।
৭৫০ কোটি টাকার বন্ড বিক্রি করার পরিকল্পনা থাকলেও বিনিয়োগের জন্য আবেদন পড়েছে ৫৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।
বন্ডে বিনিয়োগ করলে প্রতিবছর নিশ্চিতভাবেই ৯ শতাংশ মুনাফা মিলবে। আরও নানা সুযোগ-সুবিধা থাকায় সেটি ১৬ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে সেটি বিবেচনায় নিচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা; বরং পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক নানা ফেসবুক পেজে এই বন্ড না নিতে লেখালেখি করছেন তারা।
বিনিয়োগকারীরা বিশেষ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইনসে প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করে টাকা ফেরত না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করার পর দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র করার কাজ পাওয়ার ঘোষণায় বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারদরে উত্থান হচ্ছে গত বছরের এপ্রিল থেকে।
গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে ১৩ টাকার ঘরে নেমে আসা কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়তে বাড়তে এখন ১১০ টাকার আশপাশে উঠে এসেছে।
গত মে মাসে শেয়ারদর ৯০ টাকার ঘরে ওঠার পর টানা দুই মাস একটি বৃত্তেই ঘুরপাক খেয়েছে। এর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনের শীর্ষে থেকেছে কোম্পানিটি।
একটি বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়ার মধ্যেও লেনদেনে সেরাই থাকছে বেক্সিমকো লিমিটেড। এর মধ্যে জুনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করলেও জুলাইয়ে এসে বিপুলসংখ্যক কিনেছেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে মাস শেষে শেয়ার লেনদেনের যে হিসাব দেয়া থাকে, তাতে দেখা যায়, মে শেষে কোম্পানির শেয়ারের ১৫.১৮ শতাংশ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। জুন শেষে তা কমে দাঁড়ায় ১৩.৬২ শতাংশে।
অর্থাৎ এ এক মাসে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৪ শেয়ার বিক্রি করেছে তারা।
এ সময়ে শেয়ারদর ওঠানামা করেছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৯৮ টাকা ৮০ পয়সার মধ্যে।
জুলাইয়ে এসে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এ মাস শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮.২২ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসেই বাড়ে ৪.৬০ শতাংশ।
মোট ৮৭ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৯টি শেয়ারে বিভক্ত বেক্সিমকো লিমিটেড। এর ৪.৬ শতাংশ শেয়ার হয় ৪ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার ৬৬৮টি।
আগস্টে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন আরও বেড়েছে। মাস শেষে হিসাব পাওয়া যাবে যে কাদের হাতে কত শতাংশ শেয়ার আছে।
এ মাসের শুরুতে কোম্পানির শেয়ারদর ৯২ টাকা হলেও এক পর্যায়ে তা ১১০ টাকা হয়ে যায়। তবে কিছুটা কমে সবশেষ দাম হয় ১০৪ টাকা ৩০ পয়সা।
বছরের শুরুতেই আলোচনায় আসে বেক্সিমকো। ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রাথমিক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) উৎপাদনে নাম লেখায় তারা, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম পিপিই পার্ক।
জুনে আবার তারা আলোচনায় আসে তিন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পেয়ে।
কার কাছে কত শেয়ার
বেক্সিমকো লিমিটেডের বর্তমানে মোট শেয়ার আছে ৮৭ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৯টি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের হিস্যার তথ্য
শেয়ারের মধ্যে ৩০.৫৫ শতাংশ বা ২৬ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪১৭টি আছে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, যা জুন ও জুলাই মাসে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
জুন মাসে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ১৩.৬২ শতাংশ বা ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩১টি ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল মোট শেয়ারের ৫৪.৩৬ শতাংশ বা ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪২টি।
এ সময়ে মোট শেয়ারের ১.৪৭ শতাংশ বা ১ কোটি ২৮ লাখ ৮১ হাজার ৮৮৭টি শেয়ার আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে, যা জুলাইয়েও অপরিবর্তিত আছে।
জুনে উদ্যোক্তা পরিচালক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশের কোনো পরিবর্তন না হলেও বড় পরিবর্তন হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ কমে হয়েছে ৪৯.৭৬ শতাংশ।
বিশ্লেষকের ভাষ্য
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আচরণ হচ্ছে শেয়ারে মুনাফা হলে মুনাফা তুলে নেয়া। কিন্তু কোনো কোম্পানির যে অগ্রগতি বা তার যে আর্থিক উন্নয়নের সম্ভাবনা, সেটি বিবেচনা করে না।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বেক্সিমকো নয়, যেকোনো কোম্পানির শেয়ারে দর বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই সেগুলো ক্রয় করে।’
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারা
পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পুঁজিবাজারে তাদের সবচেয়ে দক্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে দেখা হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হচ্ছে মূলত অনুমোদিত স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য বা ব্রোকারেজ হাউস।
ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, কাস্টডিয়ান, ট্রাস্টি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও পুঁজিবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক বা তফসিলি ব্যাংক পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ করে থাকে, তাদেরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।