প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ডাকবাংলোর সামনে জড়ো হয় ১৫ থেকে ২০টি খ্যাঁকশিয়াল। তারা অপেক্ষায় থাকে বিহারের তত্ত্বাবধায়ক ফজলুল করিম আরজুর।
আরজু তাদের জন্য নিয়ে আসেন খিচুড়ি আর পাউরুটি। উদর পূর্তিতে ব্যস্ত হয় শিয়ালগুলো। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বা সোমপুর মহাবিহারের এ চিত্র প্রতিদিনের।
বিহারের বিভিন্ন মাটির ঢিবিতে থাকে প্রায় ৫০টি শিয়াল। সর্বভূক প্রাণীগুলো বিহারের দর্শনার্থীদের ফেলে যাওয়া খাবারের ওপরেই নির্ভর করত। তবে করোনা মহামারিতে ছন্দপতন। বিহার বন্ধ থাকায় পর্যটকের সমাগম বন্ধ থাকায় খাদ্যসংকটে পড়ে প্রাণীগুলো।
এমন অবস্থায় প্রতি সন্ধ্যায় শিয়ালগুলোকে খাবার দেয়া শুরু করেন আরজু। এই কাজে তাকে সাহায্য করেন বিহারের সাইট পরিচালক সারোয়ার হোসেন ও কেয়ারটেকার মাসুম হোসেন।
সাইট পরিচালক সারোয়ার হোসেন বলেন, “গত বছর লকডাউন দেয়ার পর থেকে সন্ধ্যা হলেই খ্যাঁকশিয়ালগুলো অতিরিক্ত চিৎকার করত। স্যারকে বিষয়টা জানালে তিনি বলেন, ‘মনে হয় খাবারের জন্য।’ তারপর স্যার বললেন, ‘এখন থেকে প্রতিদিন তাদের খাবার দেয়া হবে। চাল, ডাল, মাংসসহ যা লাগে সেই টাকা আমি দেব।’ তখন থেকে প্রতিদিন স্যার খাবার দেন। আমরা ওনাকে সহযোগিতা করি।”
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ডাকবাংলোর সামনে খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা একটি শিয়ালকেয়ারটেকার মাসুম হোসেন বলেন, ‘আমি প্রতিদিন শিয়ালগুলোর জন্য খিচুড়ি রান্না করি। তারপর স্যার তাদের ডাক দিলেই কাছে চলে আসে। প্রথম দিকে একটু ভয় লাগছিল যদি কামড় দেয় বা আক্রমণ করে! এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ডাকলেই খাবারের জন্য খুব কাছে চলে আসে। খেয়ে আবার চলে যায়।’
শিয়ালদের খাবার দেয়া আরজু বলেন, ‘এদের খাবারের জন্য সরকারি কোনো বাজেট নেই। আমার ব্যক্তিগত অর্থ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করি। বদলগাছী উপজেলার ইউএনও মহোদয়, এসি ল্যান্ড স্যার ও জয়পুরহাটের সেনাবাহিনীর একটি টিম কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
‘তবে আমি যতদিন এখানে দায়িত্ব পালন করব, শিয়ালগুলোর খাবারের কোনো সংকট হবে না। আমি চলে যাওয়ার পর নতুন করে যিনি দায়িত্বে আসবেন, তাকেও অনুরোধ করে যাব যেন এই প্রাণীগুলোর প্রতি খেয়াল রাখেন। সব প্রাণীর সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এদের জন্য কিছু করতে পেরে আমি নিজেও খুব আনন্দিত ও প্রশান্তি অনুভব করছি।’
ওই এলাকার বাসিন্দা জয়দেব সাহা জানান, আরজুর এমন উদ্যোগ সবার নজর কেড়েছে। খ্যাঁকশিয়ালের প্রতি এমন ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।