ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে সিলেট বিএনপি। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের পদত্যাগের রীতিমতো হিড়িক পড়েছে।এবার একসঙ্গে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতাকর্মী। বুধবার বিকেলে এমন ঘোষণা দেন তারা।পদত্যাগকারীদের মধ্যে সিলেট জেলার ১৪টি উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়করা রয়েছেন।সিলেটে বিএনপির এই পদত্যাগ পর্বের সূচনা করেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান জামান। গত ১৮ আগস্ট দলের মহাসচিবেকর কাছে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি।পদত্যাগপত্রে নানান অভিযোগের সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনে তার মতামত উপেক্ষা ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ আনেন।এরআগের দিনই সিলেট জেলা ও মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি।জামানের পদত্যাগের পর তোলপাড় শুরু হয় বিএনপিতে। ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করা শুরু করেন তার অনুসারী নেতারা।জামানের পদত্যাগের দুদিন পর নবগঠিত জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ১১ নেতা।এরপর ২২ আগস্ট বিএনপির সহযোগী সংগঠন তাঁতী দল থেকে পদত্যাগ করেন মহানগর তাঁতী দলের সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গফফার।আর বুধবার একসঙ্গে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শাখার স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন।সিলেট নগরের মিরাবাজারে সংবাদ সম্মেলন করে বুধবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন তারা।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল।লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এক যুগ ধরে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখে জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তবে আমাদেরকে বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি হাস্যকর কমিটি উপহার দেয়া হয়েছে। ‘সদ্যবিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মওদুদুল হক মওদুদকে নতুন ঘোষিত কমিটির ৩১ নম্বর সদস্য, সিটি করপোরেশনের দুইবারের কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিনকে ৩৮ নম্বর সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক বেলালকে সদস্য, সদর উপজেলার আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম কাদিরকে সদস্য ও আলতাফ হোসেন বিলালকে ৬১ নম্বর সদস্য রেখে অপমান, অপদস্ত করা হয়েছে।’এ সময় আলতাফ হোসেন বিলাল বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমকে ইনসাফ থেকে বঞ্চিত, অপমান ও অপদস্থ করার কারণে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় সংসদের সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান জামান গত ১৮ আগস্ট পদত্যাগসহ ৩৬ বছরের দীর্ঘ রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন। সিলেটে বিএনপি প্রতিষ্ঠায় তিনি পারিবারিক অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে, সীমাহীন প্রতিকূলতার মাঝে দলকে প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সোনালি সময় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলে ব্যয় করেছি। আমরা যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে জীবনবাজি রেখেছি, রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়েছি, সংসার থেকে বিতাড়িত হয়েছি, আজ প্রিয় সংগঠন আমাদের তামাশায় রূপান্তরিত করেছে। আমাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়া আলোচিত সংগঠন সিলেট স্বেচ্ছাসেবক দল। আজ সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্যদের হাতে নিমজ্জিত। আমরা যারা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্যদের নেতৃত্বে কাজ করা আমাদের জন্য অপমান ও লজ্জাজনক। তাই আমরা স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগকারী নেতারা হলেন- সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম কাদির, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সুজন মিয়া, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাসান আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হেলাল আহমদ, গোলাপগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাজু আহমদ চৌধুরী, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন, কানাইঘাট পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাচ্চু, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল খয়ের, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন বতুল্লা, গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এখলাছুর রহমান, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক আহমদ, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম রেজা, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়েছ আহমদ চৌধুরী, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাওছার আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মো. সাবের আহমদ, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিসবাহ আহমদ, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান আহমদ নান্টু, জালাল উদ্দিন, রাজু আহমদ, আখতার আলী, কালাম আহমদ, মখলিছ আহমদ, আরিফ আহমদ, আব্দুল আহাদ পারভেজ, সিদ্দেক আহমদ, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজান আহমদ, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল ইসলাম বাচ্চু, মো. আছলাম, সাদিকুর রহমান বাবলু, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক কামাল হোসেন, মাহবুবুল আলম শাহিন, রুমেল আহমদ, সাইফুল উল্যা আহমদ, জামিল আহমদ, কিবরিয়া আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন, সামাদুর রেজা, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাজ্জাদ আলী শিপলু ও শেখ শাহজাহান আহমদ। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শাখার নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করেছেন।সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আমিন আহমদ, মিছবাহুর রহমান, খোকন মিয়া, আলা উদ্দিন আলী, শমসের হোসেন, হান্নান আহমদ, রাব্বি হোসেন, দিলওয়ার হোসেন, শায়েস্তাউর রহমান, আলাল মিয়া, বদরুল ইসলাম, মিনহাজ উদ্দিন, শহিদ আহমদ, জাকারিয়া হোসেন, আহমেদ জামিল, রুম্মান আহমদ, ফয়েজ আহমদসহ আরও অনেকে।
স্বেচ্ছাসেবক দল ছাড়ল ‘অপমানিত’ শতাধিক নেতাকর্মী
‘এক যুগ ধরে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখে জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তবে আমাদেরকে বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি হাস্যকর কমিটি উপহার দেয়া হয়েছে।’
-
ট্যাগ:
- স্বেচ্ছাসেবক দল
এ বিভাগের আরো খবর/p>