প্রেম, বিয়ে ও তালাক নিয়ে সার্জেন্ট ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে এক নারী সার্জেন্ট যেসব অভিযোগ করেছেন, তার সত্যতা উঠে এসেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের তদন্তে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বুধবার আদালতে সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমাও দেয়া হয়েছে। তবে সার্জেন্ট ওমর ফারুক বলছেন, মামলার তদন্তে যেটা উঠে এসেছে তা সত্য না। তিনি ‘পুরুষ নির্যাতনের শিকার’ বলে দাবি করেছেন।
ওই নারী সার্জেন্ট তার বিরুদ্ধে প্রথম ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেন। এরপর ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ভুয়া ডিভোর্সের অভিযোগ এনে জালিয়াতির মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে নারী নির্যাতনের মামলাটি তদন্ত করে পিবিআই। ডিভোর্স নিয়ে জালিয়াতিসংক্রান্ত মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের নারী সার্জেন্টের সঙ্গে সার্জেন্ট ওমর ফারুকের বিয়ে হওয়ার পরবর্তী কয়েক দিন কোনো স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল না। বিয়ের পর থেকেই ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও মারামারিতে লিপ্ত ছিলেন। এরই একপর্যায়ে নারী কর্মকর্তার কাছে ১০ লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল যৌতুক দাবি করেন সার্জেন্ট ওমর ফারুক। আর দাবি করা যৌতুক না পেলে ওমর ফরুক অন্য মেয়েকে বিয়ে করার হুমকিও দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত দলিল ও কাগজপত্র পর্যালোচনা এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া মামলায় উল্লেখ করা সাক্ষীসহ নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সঙ্গেও কথা বলার পর এসব তথ্য উঠে আসে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্জেন্ট ওমর ফারুক নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিয়ে করার পর যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা না পেয়ে বিয়ের মাত্র তিন দিনের মাথায় ওই নারীকে তালাক দেন ওমর ফারুক। এবং ওমর ফারুকের দেয়া তালাকটি বৈধ ছিল না। তাই তালাকটি কার্যকর হয়নি। সুতরাং সার্জেন্ট ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩)-এর ১১(গ) ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা মামলায় বলেন, তিনি ও ওমর ফারুক একই সঙ্গে পুলিশের সার্জেন্ট পদে চাকরি পান। তারা ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে যোগ দেন। ট্রেনিংয়ের সময়ই তাদের মধ্যে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ওমর ফারুককে দ্রুত বিয়ের জন্য অনুরোধ করেন ওই নারী।
মামলায় আরও বলা হয়, ওমর ফারুক ২০২০ সালের ৩১ জুলাই নারী কর্মকর্তার সরকারি কোয়ার্টারে যান। তখন আবার বিয়ের কথা বলায় ওই নারী কর্মকর্তাকে মারধর করেন ওমর ফারুক। এ ঘটনা তেজগাঁও থানার ডিউটি অফিসারকে জানালে তার ফোন ভেঙে ফেলেন ওমর ফারুক। ডিউটি অফিসার বিষয়টি উভয় কর্মকর্তার ইউনিটপ্রধানকে জানালে তারা তাদের পরিবারকে জানান। এরপর ওই রাতেই (১ আগস্ট রাত ২টা) আপসের মাধ্যমে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার কোয়ার্টারে তাদের বিয়ে হয়।
এজাহারে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, বিয়ের রাতেই তাকে মারধর, গালিগালাজ, হুমকিসহ যৌতুকের ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেল দাবি করেন ওমর ফারুক। পরবর্তী সময়ের যৌতুকের জন্য মারধরও করেন ওমর ফারুক। এমন অবস্থায় ২০২০ সালে ১৮ নভেম্বর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এরপর পুলিশ সুপার উভয়কে ডেকে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ সুপারের অফিস থেকে বের হয়েই আবার হুমকি ও যৌতুকের টাকা দাবি করতে থাকেন ওমর ফারুক।
মামলায় বলা হয়েছে, ওমর ফারুকের সঙ্গে আপস-মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করতে গেলে থানা থেকে তাকে আদালতে মামলার পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর আদালতে হাজির হয়ে মামলা করা হলে আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
পিবিআইয়ের তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক চৌহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যা কিছু পেয়েছি তার সবই প্রতিবেদনেই উল্লেখ করেছি এবং সেটা আদালতে জমা দিয়েছি। তারপরের বিষয়টি আসলে বিজ্ঞ আদালতের বিষয়।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী ইসরাত হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিবিআই আজ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে ডিভোর্স নিয়ে আসামি ওমর ফারুকের জালিয়াতি এবং নারী নির্যাতনের বিষয়টির সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। এবার আদালতের মাধ্যমে আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে মনে করি।’
‘আমি পুরুষ নির্যাতনের শিকার’
পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসা বিষয়গুলো বুধবার সন্ধ্যায় সার্জেন্ট ওমর ফারুককে জানায় নিউজবাংলা।
এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তে যেটা উঠে এসেছে তা সত্য না। আমি পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছি। পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট সত্য নাকি মিথ্যা, সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমি পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
‘পুরুষ নির্যাতনের কোনো আইন নেই বলে আমি কোনো কিছু করতে পারছি না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বউ ছেড়ে দিলে যৌতুকের মামলা হয়ই। এটাই হয়েছে। বাদবাকি কোর্ট বিচার করবে।’