আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষা আগামী ৩১ আগস্ট থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।
বুধবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘এটা নিয়মিতদের জন্য। তাদের শেষ হলে অনিয়মিতদের ভাইভা পরীক্ষা হবে।’
গত ২৫ জুলাই থেকে মৌখিক পরীক্ষার দিন ঠিক করা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতিতে শাটডাউনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আজ এক বৈঠক শেষে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হলো।
বার কাউন্সিল এই পরীক্ষা নিয়ে শুরু থেকেই যত সিদ্ধান্ত নিয়ে আসছে, তার প্রতিটি নিয়েই তুমুল বিতর্ক উঠছে।
গত জুলাইয়ে শাটডাউনের মধ্যে গত বছরের মৌখিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের ফরম পূরণের জন্য বার কাউন্সিলে ডেকে আনা হয়। কিন্তু সেদিন আবার ব্যাংক বন্ধ ছিল। পুলিশের কঠোর নজরদারিও ছিল সে সময়। দুর্ভোগ ঘটিয়ে পড়ে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এবারও পরীক্ষার যে তারিখ দেয়া হয়েছে, সেটি পরীক্ষার্থীদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হবে। কারণ সব পরীক্ষার্থী ঢাকায় থাকেন না। দেশের সব বারের পরীক্ষার্থীরাই এতে অংশ নেবেন। দূরের পরীক্ষার্থীদের ঢাকায় আসতে প্রস্তুতির দরকার আছে, টিকিট কাটতে হয়। আবার পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পরে অনেকেই পড়াশোনা থেকে দূরে ছিলেন। তাদের প্রস্ততিরও বিষয় আছে।
চার বছর পর এই পরীক্ষা নিয়ে নানা ঘটনা ঘটেছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে এমসিকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক বাছাই করা হয়েছিল, তাদের লিখিত পরীক্ষা আটকে যায় করোনার জন্য।
করোনার সময় লিখিত পরীক্ষা না নিয়ে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিবন্ধনের দাবি ছিল পরীক্ষার্থীদের।
সেই দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন নীরব থেকে অবশেষে গত ১৯ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় পরীক্ষার তারিখ। পরীক্ষায় প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।
কিন্তু সেদিন ৫টি কেন্দ্রে গোলযোগের কারণে পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের কী হবে, এ নিয়েও বেশ কিছুদিন চুপ থাকে বার কাউন্সিল। এতে উদ্বেগ বাড়ে তাদের। কিন্তু কিছুই বলছিল না কাউন্সিল। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি তাদের পরীক্ষা আবার নেয়া হয়।
লিখিত পরীক্ষায় প্রথমে ৫ হাজার ৩৩২ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। তবে আরও কয়েক শ পরীক্ষার্থীর খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাস করে আরও ১৩০ জন পরীক্ষার্থী।
নিয়ম অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা এখন মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষায় অংশ নেবেন। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর আইনজীবী তালিকাভুক্তির চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তখন উত্তীর্ণরা সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে পেশাগত কাজ শুরু করবেন।
এই নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের বাইরে গত দুই বছর মৌখিক পরীক্ষায় যারা ফেল করেছেন, তারাও এবার অংশ নিতে পারবেন। তবে তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ভাইভা শেষে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের সনদ পেতে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আবার ওই তিন ধাপের যেকোনো একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একবার উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী পরীক্ষায় তারা দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ পান।
এই পরীক্ষাটি শিক্ষাবনিশ আইনজীবীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বার কাউন্সিলের সনদ না পেলে তারা স্বাধীনভাবে আইন পেশায় নিয়োজিত হতে পারেন না। এমনকি আইন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করারও সুযোগ থাকে না।
বার কাউন্সিল আইন অনুযায়ী প্রতিবছর দুটি পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও চার বছর আগে ২০১৭ সালে সবশেষ সনদ দেয়া হয়।