সারা দেশে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। কমেছে মৃত্যুর সংখ্যাও। তাই সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কমেছে রোগীদের চাপ। রাজশাহীর চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়।
জুলাই মাসেও ভয়ংকর পরিস্থিতি সামলাতে হিশশিম খেতে হয়েছে নগরের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে। করোনা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধির কারণে একের পর এক সাধারণ ওয়ার্ডকে করা হয়েছিল করোনা ওয়ার্ড। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুধু সংকটপূর্ণ রোগীদের ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। বাকিদের বাড়িতে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হতো।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসের পর থেকেই হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করে। তবে পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে জুন, জুলাই মাসে।
এপ্রিল মাসে করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয় ৬৫৪ জন। মারা যান ৭৯ জন। মে মাসে ভর্তি হন ৮০৮ জন, মারা যান ৬১৭ জন। জুন মাসে ভর্তি হন ১৩৯১ জন, মারা যান ৩৬৯জন। জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ১৮৭৮ জন করোনা রোগী ভর্তি হন। মারা যান সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৩১ জন।
পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাওয়ায় ১, ৩, ৪, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ২২, ২৫, ২৭, ২৯, ৩০,৩৯ ও ৪০ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ড করা হয়। সবগুলো ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। সব মিলিয়ে ৫১৩টি বেড দেয়া হয় করোনা রোগীদের জন্য।
তবে আগস্ট মাসের শুরু থেকেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা এখন কমে যাওয়ায় অনেক বেডই ফাঁকা পড়ে আছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালে বুধবার দুপুর ২ টায় সরেজমিনে দেখা যায়, করোনা ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধেক বেড ফাঁকা। শুরু হয়ে গেছে আগের রুটিন মাফিক সাধারণ চিকিৎসা। করোনার ২টি ওয়ার্ডকে সাধারণ ওয়ার্ডে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আরও ২টি ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। তাই ওয়ার্ডগুলো সাধারণ চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি মাসে করোনা ওয়ার্ডে রোগীর বাড়তি চাপ কমেছে। কমেছে করোনা রোগীর ভর্তি ও মৃত্যু সংখ্যা। বর্তমানে করোনা ইউনিটে বেডের সংখ্যা ৪১৮টি। বুধবার সকাল পর্যন্ত এখানে মোট ২০৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। বাকি বেডগুলো ফাঁকা রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, জুন জুলাই মাসে করোনা ইউনিটে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭৫জন রোগী ভর্তি হত। এখন কমে তা ৩০ আশেপাশে দাঁড়িয়েছে। আইসিইউতেও কমেছে রোগীর চাপ।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে করোনা রোগী সর্বোচ্চ ৫২২ থেকে নেমে এখন ২০৯ তে চলে আসছে। এর মধ্যেই ১৬ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে করোনার রোগীর জন্য আগের মতো ২টি ওয়ার্ড রেখে বাকিগুলোতে সাধারণ চিকিৎসা চলবে।
পরিচালক আরও জানান, অন্য হাসপাতাল থেকে করোনা রোগীদের জটিল অবস্থায় এখানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখানে এসে তাদের কারও কারও মৃত্যু হয়। তবে এ হারও কমে যাবে। আইসিইউর চাপও কমে আসছে। আগে অন্তত ৭০ জনের লম্বা লাইন থাকতো একটি বেডের জন্য। এখন অপেক্ষমান তালিকায় থাকছেন সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ জন।