বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শ্যামপুর সুগার মিল রক্ষায় ৫ প্রস্তাব কর্তৃপক্ষের

  •    
  • ২৫ আগস্ট, ২০২১ ১২:৫৬

লোকসানের মুখে গত বছর বন্ধ হয় এই সুগার মিল। এতে অনিশ্চতায় পড়েন মিলের এক হাজারের বেশি শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা। মিল রক্ষায় পাঁচটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।

কৃষিনির্ভর রংপুরে বড় কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। ছিল কেবল শ্যামপুর সুগার মিল। লোকসানের মুখে গত বছর সেটিও বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে অনিশ্চতায় পড়েন মিলের এক হাজারের বেশি শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা।

এই অনিশ্চয়তা কাটাতে গত রোববার পাঁচটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।

সেগুলো হলো মিলের নিজস্ব জায়গায় আলুর কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন, ফিলিং স্টেশন ও এলপি গ্যাস স্টেশন নির্মাণ, মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্ট স্থাপন এবং বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্ট নির্মাণ।

প্রস্তাব পাঠানোর আগে এ নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে মিল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত রোববার দুপুরে মতবিনিময় করেন।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর বন্দরে ১৯৬৪ সালে নির্মাণ হয় শ্যামপুর সুগার মিল। ১১১ দশমিক ৪৫ একর জমির ওপর নির্মিত এই মিলে আনুষ্ঠানিকভাবে মাড়াই শুরু হয় ১৯৬৭ সালে।

দৈনিক আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা রাখা হয় ১ হাজার ১৬ টন। বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ টন। বছরে মিলের মেশিন চালু থাকে তিন মাস।

চালুর পর থেকে লাভের মুখ দেখলেও ২০০০ সালের পর থেকে টানা লোকসানের মুখে পড়ে মিলটি। গত ১০ মাড়াই মৌসুমে লোকসান বেড়ে হয় প্রায় ৩৬৩ কোটি ২৯ লাখ ৯ হাজার টাকা।

এই পরিস্থিতিতে শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি মিলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে (২০২০-২১) মাড়াই মৌসুমে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।

সরেজমিনে মঙ্গলবার শ্যামপুর চিনিকলে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। দাপ্তরিক কাজকর্ম চললেও কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি কম।

যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকায় চিনিকলের যন্ত্রপাতি প্রায় নষ্টের উপক্রম। বিকল হয়ে পড়ে আছে আখ পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টরগুলো।

চিনিকলের মৌসুমি শ্রমিক মোস্তাহারুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘কুশার (আখ) মাড়াই শুরু হওয়ার টাইমে সরকার হামার মিলটা বন্ধ করে দিচে। এক পাশে কর্মহীন হইনো, অন্যদিকে করোনা চলে দেশোত। হামার দিকে আর কেউ তাকাইল না। হামার এই মিলটে চালু হইলে বউ-বাচ্চাক দুই বেলা খাবার দিবের পামো। বন্ধ হইলে কামলা দেওয়া ছাড়া উপায় নাই। ৫ মাস থাকি বেতন পাই না।’

আরেক শ্রমিক (স্থায়ী) ফারুক হোসেন বলেন, ‘লোকসানের কারণ দেখিয়ে সরকার শ্যামপুর চিনিকলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করেছে। আমাদের পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন পাইনি। প্রতিবার বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন করে শুধু এক মাসের বেতন মিলে। এমন করি কি চলবে?’

শ্যামপুর চিনিকল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান জানান, গত মৌসুমে দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে উৎপাদনে দ্বিতীয় ছিল শ্যামপুর সুগার মিল। এই মিল ঘিরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় মৌসুমি শ্রমিকরা সারা বছরের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়েন। গত পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন না পেয়ে করোনা মহামারিতে মানবেতর জীবন পার করছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘চিনিকলটি ঘিরে কয়েকটি প্রস্তাব বিএসএফআইসির কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুনজরে নেবে।’

শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লোকসানে থাকা মিলকে লাভজনক করতে আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছি। এতে মিলটিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে এখানে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের এসেছিলেন। আমরা তাকেও এই প্রস্তাবের কথা জানিয়েছি। এই মিলটি পুনরায় চালুর জন্য সরকারের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেছি।’

যা বলেছেন জি এম কাদের

বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান, চিনিকলের মেশিনগুলোর উৎপাদনক্ষমতা কমে গেলে সরকার সেগুলোর আধুনিকীকরণ করছে না কেন, শিল্পকারখানা বন্ধ করা হচ্ছে কার স্বার্থে?

তিনি বলেন, ‘দেশের চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত খাঁটি ও অর্গানিক চিনির চাহিদা দেশের বাইরে আকাশচুম্বী। যেভাবেই হোক, ভর্তুকি দিয়ে হলেও সুগার মিলগুলো খুলে দিতে হবে। হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান বন্ধ করা রাজনীতিবিদের জন্য চরম ব্যর্থতা। এ বিষয়টি নিয়ে আমি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলব।’

এ বিভাগের আরো খবর