জনগণ যাতে সহনীয় দামে চাল কিনে খেতে পারে, সে জন্য আমদানি পর্যায়ে পণ্যটির শুল্ক ব্যাপক কমানো হয়েছে।
গত ১২ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক আদেশ জারি করে চালের শুল্ক হার সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
অর্থাৎ প্রতি টন চাল আমদানিতে শুল্ক হার কমানো হয় ৩৭ শতাংশ। কিন্তু চাল আমদানিতে বড় ধরনের শুল্ক ছাড় দেয়া হলেও বাস্তবে এর প্রভাব পড়েনি বাজারে; কমেনি দাম। করোনা মহামারির মধ্যে দুর্ভোগে পড়া সাধারণ জনগণকে বেশি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে।
চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই। সরকারি গুদামে মজুতও পর্যাপ্ত। তারপরও চালের বাজার অস্থিতিশীল।
রাজস্ব বোর্ডের আদেশে চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (রেগুলেটরি ডিউটি) ২৫ শতাংশ প্রত্যাহার করে বলা হয়েছে, আমদানি পর্যায়ে শুল্ক হার কমানোর ফলে চাল সহজলভ্য হবে এবং ভোক্তা সাশ্রয়ী দামে চাল কিনতে পারবে।
রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমদানি শুল্ক বা কাস্টমস ডিউটি কমানো এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করায় সরকারের প্রায় দেড় শ থেকে ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হবে। জনস্বার্থে ব্যাপক শুল্ক ছাড় দেয়া হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
রাজধানীর আগারগাঁও বিএনপি বাজার বুধবার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। নাজিরশাইল ৬৬ টাকা, মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং বাসমতি ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বিএনপি বাজারের সারোয়ার জেনারেল স্টোরে আব্দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুল্ক কমানোর কথা খবরের কাগজে জানছি। বাজারে আমদানির চাল এখনও আসে নাই। আগের চালই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে শুধু চাল নয়, সবকিছুর দামই বাড়ছে।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চালের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় শ্রমজীবী মানুষ ও নির্ধারিত আয়ের লোকদের। কারণ পণ্যের দাম বাড়লেও তাদের আয় বাড়েনি। ফলে সমাজে এই শ্রেণির মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে।
তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সব সময় সচেষ্ট থাকে সরকার। কিন্তু নানা উদ্যোগ ও প্রণোদনাসুবিধা দেয়ার পরও কিছুতেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না; বরং দাম একবার ঊর্ধ্বমুখী হলে তা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ও বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, বাজার তদারকিতে বরাবরই সরকারে দুর্বলতা আছে। যে উদ্দেশ্যে, যাদের জন্য প্রণোদনাসুবিধা দেয়া হয়, এর সুফল খুব একটা পাওয়া যায় না। বাজার তদারকি বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা আরও সক্রিয় হওয়া উচিত।
এনবিআরের সাবেক সদস্য আলী আহমেদ বলেন, সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হলেও দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে শুল্ক-করে ছাড় দেয়া হয়। দুর্বল তদারকির কারণে অনেক ক্ষেত্রে এর লক্ষ্য পূরণ হয় না। মাঝখান থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা এর সুফল ভোগ করে।
এনবিআরের আদেশে বলা হয়, আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন শুল্ক হার কার্যকর থাকবে। তবে আমদানির আগে প্রতিটি চালানের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে।
বাসমতি কিংবা সুগন্ধযুক্ত চাল পূর্বনির্ধারিত অর্থাৎ ২৫ শতাংশ শুল্কেই আমদানি করতে হবে বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়।
চলতি বছরের শেষে আমন ধান ওঠার আগ পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানি করতে চায় সরকার।
গত ১০ আগস্ট রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সরকার ভোক্তা ও কৃষকের স্বার্থরক্ষার জন্য চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাম্পার ফলন ও পর্যাপ্ত আমদানির পরও বাড়ছে চালের দাম। কয়েক মাস ধরেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ। মাঝারি মানের ১৪ শতাংশ এবং সরু বা চিকন চালের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে মজুত ও সরবরাহ বাড়াতে চালের শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকার নিজেই আমদানি করছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আবেদন সাপেক্ষে আমদানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৬০ টন চাল আমদানি হয়েছে, যার পুরোটাই আমদানি করেছে সরকার।
বর্তমানে সরকারি গুদামে চালের মজুত রয়েছে ১২ লাখ ৩ হাজার টন। সামনে মজুত আরও বাড়বে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।