ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে আদালতের কাঠগড়ায় বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন এক ব্যক্তি।
আলোচনা চলছে এই ব্যক্তি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি ও আলোচিত সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রদীপ কুমার দাশ।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সোমবার সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনে কাঠগড়ায় ছিলেন প্রদীপসহ মামলার ১৫ জন আসামি।
প্রদীপের পরনে ছিল কালো রঙের জামা। ছড়িয়ে পড়া ছবিতে যে ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে, তার পরনেও ছিল কালো জামা। ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলেও ওই ছবি প্রচার করা হচ্ছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কাঠগড়ার ভেতরে হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। হাতে থাকা মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। তার মাথায় চুল কম। তাকে ঘিরে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন।
মঙ্গলবার সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিন প্রদীপ আদালতে আসেন গোলাপি রঙের জামা পরে। এ সময় তাকে ঘিরে রাখেন পুলিশ সদস্যরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কাঠগড়ায় মোবাইল ফোনে প্রদীপই কথা বলেন। বেশ লম্বা সময় তাকে ফোনে ব্যস্ত থাকতে দেয়া যায়। তিনি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কথা বলার জন্য ফোনটি প্রদীপকে দেন এক পুলিশ সদস্য।
সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনে বরখাস্ত ওসি প্রদীপের পরনে ছিল কালো পোশাক। ছবি: নিউজবাংলা
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, মোবাইল ফোনে কথা বলার ওই ছবিটি আজকের নয়। তবে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনের (সোমবারের) হতে পারে। কে বা কারা এই ছবি তুলেছেন, তা পরিষ্কার নয়। ফোনে প্রদীপ কার সঙ্গে কথা বলেছেন, তা বের করা জরুরি।
বিচার বিভাগীয় বাতায়নের দেয়া আদালতের আচরণবিধির কথা উল্লেখ করে ফরিদুল আলম বলেন, আদালত চলাকালে বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া বাইরের লোকজনের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরাও আদালতে ভেতরে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না। সেখানে মুঠোফোন বন্ধ রাখার নির্দেশনাও রয়েছে।
গত বছরের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।
সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিনে বরখাস্ত হওয়া প্রদীপের পরনে গোলাপি রঙের পোশাক
মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীকে প্রধান করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।
আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেয় র্যাবকে। এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত, প্রদীপসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
সিনহা হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলার ৩ সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) সদস্যা।
চার মাসেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় র্যাব। এর মধ্যে ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। গত ২৭ জুন মামলার ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। এ ছাড়া পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।