ফার্মেসিতে কিনতে গেলে প্রতিটি সার্জিক্যাল মাস্কের দাম পড়ে পাঁচ টাকা। সেই মাস্কই বুড়িগঙ্গার পাড়ে পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজের নিচে মিলছে ৭০ পয়সায়।
করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে বাবুবাজার ব্রিজের নিচে বসে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাস্কের বাজার। শুধু সার্জিক্যাল নয়; কেএন-৯৫, এন-৯৫ সহ বাহারি রঙের মাস্ক মেলে এখানে।
ঢাকা ও আশপাশের এলাকার ভ্রাম্যমাণ ও খুচরা বিক্রেতারা এই বাজার থেকে পাইকারি দরে মাস্ক, গ্লাভস ও হেয়ার ক্যাপ কেনেন। প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মাস্ক এখানে বিক্রি হয়।
গত বছর দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মাস্কের চাহিদা বেড়ে যায়। ফার্মেসিগুলোতে দেখা যায় মাস্কের সংকট। সে সময় প্রতিটি সার্জিক্যাল মাস্ক বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়, কেএন-৯৫ মাস্ক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় ও এন-৯৫ মাস্ক হাজার টাকায়।
মাস্কের চাহিদা মেটাতে দেশেই তৈরি হতে থাকে মাস্ক। একটু একটু করে বাবুবাজার ব্রিজের নিচে গড়ে ওঠে মাস্কের বড় বাজার। এখন এখানে শতাধিক ব্যবসায়ী মাস্ক নিয়ে বসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায় অস্থায়ী এই মাস্কের বাজার।
এখানে প্রতিটি সার্জিক্যাল মাস্ক ৭০ পয়সায়, কেএন-৯৫ ২০ থেকে ৩০ টাকায়, কে-৯৫ ১০ টাকায়, সুতি কাপড়ের মাস্ক ৮ থেকে ১০ টাকায়, চায়না কাপড়ের মাস্ক ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। মান নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকলেও মাঝারি থেকে স্বল্প আয়ের মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে এখানকার মাস্কগুলো।
এখান থেকে কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা ১০ টাকায় ৫ থেকে ৩টি সার্জিক্যাল মাস্ক, ৩০ থেকে ৫০ টাকায় কে-৯৫ মাস্ক, ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় চায়না কাপড়ের মাস্ক বিক্রি করেন।
মাস্ক বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন কেরানীগঞ্জের মোজাম্মেল হোসেন। তিনি জানান, এই বাজার গড়ে ওঠার আগে থেকেই তিনি মাস্ক বিক্রি করেন। তবে মাস্কের নিয়মিত সরবরাহ ছিল না। ধীরে ধীরে মাস্কের নতুন কারখানা গড়ে উঠেছে। এখন আর তার মাস্কের সরবরাহ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।
মোজাম্মেল বলেন, ‘আমরা পাইকারি বিক্রেতারা মার্কেটের দোকানগুলোর সামনে বসি। বেলা হলে যখন দোকান খুলে যায় তখন আর বসতে পারি না। তা ছাড়া পুলিশও একটু বেশি সকাল হলেই তুলে দেয়।’
রমজান শাহ বেশ কয়েক বছর দুবাইয়ে কাজ করেছেন। দেশে ফিরে তিনি এখন মাস্কের ব্যবসায়ী। এই বাজারের বড় মাস্ক ব্যবসায়ীদের মধ্যে তিনি একজন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম প্রথম মাস্ক কেউ কিনতে চাইত না। অনেক আকুতিমিনতি করে বুঝাতাম। তখন বিক্রি কম ছিল কিন্তু দাম ছিল বেশি। এখন বিক্রি অনেক বাড়লেও দাম একেবারে কম। যে যত আকর্ষণীয় মাস্ক রাখতে পারবে তার বিক্রি তত বেশি।’
স্থানীয় একজন জানান, এই জায়গাটা একসময় পরিত্যক্ত ছিল। ময়লার দুর্গন্ধে কেউ আসত না। করোনার মধ্যেই এখানে বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন এখন মানুষের ভিড় থাকে।
মদনপুর থেকে আসা এক খুচরা বিক্রেতা জানান, তিনি ঢাকাসহ আশপাশের অনেক হকারকে মাস্ক সরবরাহ করেন। তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাওয়ায় এখানে কিনতে আসেন। তার দাবি শিগগিরই যেন এই বাজারটিকে স্থায়ী করা হয়।