দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধারে ব্যস্ত বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। এতে অভিযুক্তরা সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
হাইকোর্ট বলছে, দুদকের উচিত নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্ত করে অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনা। তবেই কেবল দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে।
দুর্নীতি মামলা থেকে এক আসামির অব্যাহতির আদেশ বাতিল সংক্রান্ত এক রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীম হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি আসামি মো. জহিরুল ইসলামের অব্যাহতির আদেশ বাতিল করে সংক্ষিপ্ত রায় দেয়।
মঙ্গলবার তার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়।
৭২ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলেছে, দুদক আইনে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান, তদন্ত শেষ করতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
আদালত বলেছে, যদি দুদকের কোনো কাজ, আদেশ, কার্যপ্রণালী এবং তাদের নিষ্ক্রীয়তা আইনের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে সেক্ষেত্রে দুদক যদি যথাযথ ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নিরব থাকে, তাহলে তাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে।
রায়ের ৬৫ পৃষ্ঠায় আদালত বলেছে, ‘বর্তমানে আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, দুর্নীতির বড় বড় মামলাগুলোতে আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার চেয়ে দুদক আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারে ব্যস্ত। এর ফলে সুবিধা নিচ্ছে আসামিপক্ষ।’
আদালতের ভাষ্য, শুধু টাকা উদ্ধারই দুদকের কাজ না। তাদেরকে শুধু এ কাজের জন্যই ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বরং টাকা পুনরুদ্ধারে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, অভিযুক্ত অর্থ আত্মসাৎ বা পাচার করেছেন।
আদালত বলছে, তার মানে এটা বলা যায় যে, টাকা উদ্ধার হলেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে মামলা দায়েরের পর অনেক সময় পার হলেও অনেক ক্ষেত্রে দুদক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র বা অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে পারেনি, যা স্পষ্টত আইনের বিধানের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে আদালত।
রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে একটি রায় প্রকাশ হয়েছে। আদালত বলেছে, শুধুমাত্র টাকা উদ্ধারই দুদকের মুখ্য কাজ না। লিগ্যাল অ্যাকশনের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। রায়ের পুরোটা আমি এখনও পড়িনি। এছাড়া আরও অনেক নির্দেশনা এবং পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আদালত।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মমিনুর রহমান ও সহকারী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলামকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
দুদকের রংপুরের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ওই দিনই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আসামি মো. জহিরুল ইসলাম মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে ২০১৯ সালের ৬ মে আবেদন করেন। তার আবেদনের শুনানির পর ওই বছর ১২ জুন রংপুরের বিশেষ জজ আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে তাকে অব্যাহতি দেয়।
এ আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে দুদক হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করে। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জহিরুল ইসলামকে দুর্নীতির মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে।
রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সংক্ষিপ্ত রায় দেয় হাইকোর্ট। ওই রায়ে বিশেষ আদালতে বিচারাধীন মামলাটির বিচার কাজ এক বছরের মধ্যে অথবা দ্রুত সময়ে শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।