২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিএনপি নেতাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগের নেত্রী বেগম আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটি এই আলোচনার আয়োজন করে।
ক্ষমা না চেয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে মন্তব্য করে হানিফ আরও বলেন, আমরা বহুবার বলেছি এই ঘটনা ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। আমরা দেখেছি, আগস্ট মাস আসলে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনও মিথ্যাচার করেন।
‘আমি বহুবার বলেছি, মানুষ চলার পথে ভুল করতে পারে। রাজনীতি করতে গেলে ভুল হতে পারে। যদি সে ভুল স্বীকার করে কেউ জনগণের কাছে ক্ষমা চায় এবং সুন্দর ভবিষ্যতের আশ্বাস দেয় তাহলে তাদের পক্ষে ভালো কিছু করা সম্ভব।’
এসময় এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের বহুবার বলেছি আপনারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে আপনারা জড়িত ছিলেন তার অজস্র প্রমাণ রেখে গেছেন। ভয়াবহ এই অপরাধের দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু করেন।
‘হয়তো স্বজন হারারা ক্ষমা করবেন না, তবে জনগণ ক্ষমা করলেও করতে পারে। সেটা না করে আপনারা নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছেন।
২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না বলে উল্লেখ করেন মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা। দুই ঘটনায় নেপথ্যের কারিগরদের উদ্দেশও একই। গ্রেনেড হামলার ঘটনার আজ ১৭ বছর পার হয়েছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এড়াতে পারেন না।
লন্ডনে বসে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে কোন লাভ হবে না, তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে হানিফ বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে হাওয়া ভবনে বসে হামলার বিষয়ে জঙ্গিগোষ্ঠীদের নিয়ে তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়েও বৈঠক করেছেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর সেসময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তার সঙ্গে বিএনপির হারিস আহমেদ, ডিজিআইএফের চিফ, এনএসআইয়ের চিফ এবং জঙ্গিদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে এ পরিকল্পনা করেছিল। যারা ধরা পড়েছেন, তাদের জবানবন্দিতে এই তথ্যগুলো বেরিয়ে এসেছে। লুকানোর কোন উপায় নেই। সেদিন ঘটনা দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম সেটি ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। আর সেই জন্য দুই ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার আলামত নষ্ট করে দেয়া হয়েছিল।
রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশে হত্যার ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে, এমন আশা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এই ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছেন তাদের স্বজনদের প্রত্যাশা ছিল কুখ্যাত সন্ত্রাসী তারেক রহমানের ফাঁসির আদেশ হবে। কিন্তু সেটি হয়নি এজন্য অনেকের মনে কষ্ট আছে। তারপরও আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা বিশ্বাস করি এই বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে হত্যার ষড়যন্ত্রের পথ বন্ধ হবে।
ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া এই ন্যাক্কারজনক হামলার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না বলেও যোগ করেন মাহবুব উল আলম হানিফ। দায়ভার বেগম খালেদা জিয়াকেও বহন করতে হবে। যদিও হয়তো উনি বিচারের আওতার বাইরে রয়েছেন তারপরও তার এই দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা আশা করছি এই রায় দ্রুত কার্যকর হবে। রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশের সকল হত্যা আর ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রহুল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দারসহ অনেকে।