ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শালিহর কদমতলা বধ্যভূমিতে নবনির্মিত স্মৃতিসৌধের নামফলকে ‘গণশহীদদের’ নামের তালিকার শিরোনামে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় ‘মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের’ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এটি ভুল না অবহেলা, এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর দায় ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের ওপর চাপালেও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের ভুল মানতে নারাজ। সরকারি নথিপত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা দেখেই এটি নির্মাণ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।
গণশহীদরা হলেন: মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, নবর আলী, কিরদা সুন্দরী, শচীন চন্দ্র বিশ্বাস, তাড়িনীকান্ত বিশ্বাস, খৈলাশ চন্দ্র দাস, শত্রুঘ্ন নব দাস, আমেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, দেবেন্দ্র চন্দ্র নমদাস, কামিনীকান্ত বিশ্বাস, রায়চরণ বিশ্বাস, মধুসূদন ধর, ছাবেদ হোসেন ব্যাপারীসহ নাম না জানা আরও অনেকে।
আর এই নামগুলোর তালিকায় ‘মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে এসে গ্রামের নিরীহ মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নিহতদের তারা গণকবর দেয় শালিহর গ্রামের কদমতলায়।
চলতি বছর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় আফছার আলী নামে একজন বলেন, গুরুত্ব দিয়ে নামফলক নির্মাণ করলে এমন ভুল হওয়ার কথা ছিল না। সবার চোখে এই ভুলটি ধরা পড়লেও এখনও সংশোধন করা হয়নি। এতে করে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জামাল উদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা লেখার ফলে গণশহীদদের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা মনে করছেন। মাঝেমধ্যে তরুণ ছেলেমেয়ে ও শিক্ষার্থীরা এই গণকবর দেখতে আসে। এখান থেকে ভুল তথ্য পাচ্ছে তারা।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড গৌরীপুর পৌর শাখার সভাপতি মশিউর রহমান কাউসার বলেন, ‘শালিহর বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের শুরু থেকেই চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এটা কেবল একটি ভুল নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘গণশহীদরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন কি না, সেটা সরকারের বিষয়। এর আগেই নামের ওপরে মুক্তিযোদ্ধা লেখা হলো কেন? দায়িত্বহীনভাবে কাজ করার ফলেই এমনটি হয়েছে। দ্রুত ভুল সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ নিউজবাংলাকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে উল্লিখিত ব্যক্তিদের গণশহীদ হিসেবে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। কাউকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এ ভুলের দায় গণপূর্ত বিভাগের।
এটি ভুল নাকি সরকারি নথিপত্র দেখেই শিরোনামে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গণশহীদদের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখের তালিকা মোতাবেক বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধের নামফলকে তাদের নাম লেখা হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো ভুল নেই।’
তিনি বলেন, নবনির্মিত স্মৃতিসৌধ হস্তান্তরের সময় ইউএনও কিংবা স্থানীয় কোনো মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেননি। খুব দ্রুত এই ভুলটি সংশোধন করা হবে।