দেশে গেল কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের বিদেশি ফল চাষ হচ্ছে। দেশীয় বাজারে চাহিদা থাকায় অনেকেই ঝুঁকছেন ফল চাষের দিকে।
এমনই এক ফলের নাম ড্রাগন। কয়েক বছর আগেও দেশের মানুষ এটিকে জানত বিদেশি ফল হিসেবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ফলের চাষ এতটা বেড়েছে যে, এখন অনেকই মনে করেন ড্রাগন দেশি ফল।
দেশের অন্যান্য জেলার মতো বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মাদারীপুরের চাষিরা। ভালো ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকায় প্রতিবছরই বাড়ছে চাষের পরিধি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল জেলায় বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে।
গত বছর বন্যায় ড্রাগন বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় এ বছর আবার আবাদ করেছেন চাষিরা। ৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। গেল বছর হয়েছিল সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে। পুরো জেলার মধ্যে মাদারীপুর সদরেই এ ফলের চাষ হচ্ছে বেশি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামের বাসিন্দা সজীব হোসেন সাদ্দাম। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভুটান ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহ জাগে তার।
দেশ-বিদেশ থেকে উন্নত জাতের প্রায় ৫ হাজার ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করে শুরু করেন চাষাবাদ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সাড়ে ৩ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করেন তিনি। তবে সফলতা আসার আগেই আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যায় বাগান। গোড়া পচে মরে যায় গাছ।
তবে এতে দমে যাননি সাদ্দাম। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছরের জানুয়ারিতে আবার শুরু করেন ড্রাগন চাষ। খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এরই মধ্যে গাছে ফুল, ফল আসতে শুরু করেছে।
ড্রাগন ফল পরিচর্যা করছেন চাষি সজীব হোসেন সাদ্দাম। ছবি: নিউজবাংলা
মাসে দুইবার ফুল আসে এই গাছে। একটি খুঁটিতে চারটি করে গাছ লাগানো হয়। প্রতিটি খুঁটি থেকে মাসে ৪ থেকে ৫ কেজি ফল পাওয়া যায়।
সজীব হোসেন সাদ্দাম বলেন, ‘বিদেশে যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছি, তার অর্ধেকও এখন করতে হয় না। অথচ আয় বিদেশের চেয়ে কম নয়। আশা রাখি আর বিদেশে যাওয়ার নাম নেব না। আমার এই বাগান দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ আসে।’
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এ বছর জেলায় ৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফল চাষ হচ্ছে। আশা করছি, এই ৫ হেক্টর জমি থেকে সাড়ে ১২ টন ফল উৎপাদন সম্ভব হবে। আগামীতে চাষাবাদ বাড়াতে কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হবে কৃষকদের। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের বীজ দেয়া হবে তাদের।’