ঈদুল আজহার পর থেকেই নতুন করে সুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ চলছে রাজধানীর ব্যস্ত কয়েকটি সড়কে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সব সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা। যানজটের কারণে যানবাহনে যাতায়াতেও লাগছে দীর্ঘ সময়।
মঙ্গলবার সাতরাস্তার মোড়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা ও নিকেতনের ২ নম্বর গেট এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। ওই এলাকাগুলোতে সুয়ারেজের লাইন বসানোর কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
সাতরাস্তার মোড়ে দেখা যায়, সুয়ারেজ লাইন বসাতে রাস্তা কাটার কারণে যান চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এ জন্য মগবাজার থেকে এয়ারপোর্টগামী যানবাহনগুলো খুবই ধীরগতিতে চলাচল করছে। আর প্রায়ই থেমে থেমে লাগছে যানজট।
এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরিফ হোসাইন।
তিনি বলেন, ‘রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এ রাস্তায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। কখনও কখনও সাতরাস্তার মোড় পার হতেই চল্লিশ মিনিটের মতো লেগে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত যানজট তীব্র আকার ধারণ করে সকালে অফিস যাওয়ার সময়ে এবং বিকেলে।’
একই কথা বললেন ৬ নম্বর রুটের বাসের চালক সুমন আলী।
তেজগাঁও এলাকায় রাস্তার ওপরেই ফেলে রাখা হয়েছে ম্যানহোলের স্ল্যাব
তিনি বলেন, ‘আগে এত জ্যাম এই রাস্তায় লাগত না। রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায়ই জ্যাম লাগে। কখনও কখনও ৩০-৪০ মিনিটও এখানে বসে থাকতে হয়।’
সাতরাস্তার মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ মো. ইসরাফিল বলেন, ‘রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এ রাস্তায় যানজট বেড়েছে। এমনিতেই ফ্লাইওভারের কারণে রাস্তাটি কিছুটা সরু। এর ওপর আবার সুয়ারেজের লাইন বসাতে রাস্তার প্রায় অর্ধেক খোঁড়া হয়েছে, এ জন্য প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।’
সুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজের সুপারভাইজার মনির শেখ বলেন, ‘এই কাজটি উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় চলছে। কাজটি শুরু হয়েছে কোরবানির ঈদের পর। আশা করছি, দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাতরাস্তার মোড় থেকে শুরু হওয়া কাজটি নাখালপাড়া পর্যন্ত চলবে। তবে সাতরাস্তার কাজ শেষ হলেই মূল সড়কের যানজট কমে আসবে।’
সাতরাস্তার বিপরীতে বেগুনবাড়ির রাস্তাতেও চলছে সুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ, যা চলবে সিদ্দিক মাস্টারের বাড়ি হয়ে তিব্বত মোড় পর্যন্ত।
জায়গাটিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মাঝখানে রাস্তা খুঁড়ে সুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন চলছে ম্যানহোল তৈরির কাজ। তবে ম্যানহোলগুলো রাস্তার পাশে এলোমেলো ফেলে রাখায় যানজটের পাশাপাশি পথচারীদেরও ভোগান্তি হচ্ছে।
জাতীয় নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউটে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন সরকারি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান হাওলাদার।
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। রাস্তার যে অবস্থা, রিকশা ছেড়ে হেঁটেই রওনা দিই, যেন সময়মতো ডাক্তার দেখাতে পারি। কিন্তু এ রাস্তায় তো হাটাঁও যাচ্ছে না।’
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে তৈরি হয়েছে যানজট
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা রহিম শেখ বলেন, ‘রাস্তা কাটা হয়েছে মাঝ বরাবর। তাই দুই দিকের রাস্তায় যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় যে যার খুশিমতো যানবাহন রাখছে, চালাচ্ছে।’
সুয়ারেজের নতুন লাইন বসানোর কাজের সঙ্গে জড়িত একাধিক শ্রমিক জানালেন, কাজ শেষ হতে আরও দুই মাস সময় লাগতে পারে।
নিকেতন ২ নম্বর গেট এলাকাতেও শুরু হয়েছে নতুন করে সুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ। তবে কাজটি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সড়ক কাটার কারণে এখানেও যানবাহন চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।
তবে এখানে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বেশ তৎপর দেখা যায়। যানজট যেন তীব্র না হয়, সে জন্য তারা রং সাইডে গাড়ি চালানো, ওভারটেক না করার জন্য চালকদের নির্দেশ দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় ট্রাফিক পুলিশ সোহরাব হোসেনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘কাজটি শুরু হওয়ার পর থেকে যান চলাচল কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। তবে আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যেন যানজট তীব্র আকার ধারণ না করে।’
কাজের সুপারভাইজার খোকন মিয়া জানান, নিকেতন ২ নম্বর গেট থেকে শুরু হয়ে কাজটি চলবে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের বিপরীত দিকের রাস্তা পর্যন্ত।
কবে নাগাদ কাজটি শেষ হতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সময় নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। কারণ লকডাউনের কারণে অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিল। পরে নতুন করে কেবল শুরু হয়েছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাসার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র মহোদয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন কোনো উন্নয়নকাজে যেন নগরবাসী কষ্ট না পায়, সবকিছু যেন সচল থাকে। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তাকে জানাব, যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়।’