বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ও আকর্ষণীয় সেতুগুলোর একটি অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি হারবার ব্রিজ’। এবার একই আদলে দৃষ্টিনন্দন সেতু হবে ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর।
এক কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি দেখতে হবে ধনুকের মতো। নদীর মধ্যে কোনো পিলার থাকবে না।
এ সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবারের একনেক সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একনেক সভা শেষে প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, একনেক সভায় মোট আট প্রকল্প অনুমোদন পায়। মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ’। ১১০০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি দেশের প্রথম মডেল সেতু হিসেবে নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, সেতুর দুই পাড়ে সাড়ে ছয় কিলোমিটার চার লেন সড়ক করা হবে। ইপিজেডের সঙ্গে এসব সড়ক যুক্ত হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশিদ বলেন, ‘এ সেতুর বিশেষত্ব বাংলাদেশে এই প্রথম স্টিল আর্চ সেতু হচ্ছে। নদীর ওপর মূল সেতু ৩২০ মিটার। সাধারণ গার্ডার সেতু করতে গেলে এখানে চার থেকে পাঁচটি পিলার দিতে হতো। এতে নেভিগেশন প্রবলেম হবে। কিন্তু এ সেতুতে পিলার দেয়া লাগবে না। নদীর প্রবাহ ঠিক থাকবে। মূল সেতুটি স্টিল আর্চ হলেও নদীর দুই পাড়ে সাধারণ সেতুর মতোই হবে।’
এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রকল্পে চীনের নেতৃত্বাধীন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ সহায়তা ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
দেশে নতুন প্রযুক্তির এ স্টিল আর্চ (ধনুক) ব্রিজ নির্মাণ তদারকির জন্য দেশি-বিদেশি পরামর্শকরা কাজ করবে। প্রকল্পের আওতায় ৩৩ দশমিক ২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ১১০০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ ছাড়াও ওভারপাস ও এসএমভিটি লেনসহ ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার পৃথক সড়ক নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ময়মনসিংহ বিভাগের আওতাধীন উত্তরাঞ্চলের জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার নিরাপদ, উন্নত ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ স্থাপন করা।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে ২ হাজার ৯৩ মিটার ব্রিজ ফাউন্ডেশন এবং সাবস্ট্রাকচার, ৩২০ মিটার স্টিল আর্চ ব্রিজ সুপারস্ট্রাকচার, ১ হাজার ৭৭৩ মিটার কংক্রিট ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, সড়ক বাঁধে ১৪ দশমিক ৬৫ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, একটি টোল প্লাজা নির্মাণ, ৩৩ দশমিক ২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৩৩ দশমিক ২ হেক্টর পুনর্বাসন, ইউটিলিটি স্থানান্তর, ড্রেইনেজ, রোড মার্কিং, সাইন-সিগনাল, বেরিয়ার, গার্ড রেল, রেস্ট এরিয়া নির্মাণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ।