বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার মাঝে বইমেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ

  •    
  • ১৮ মার্চ, ২০২১ ১৯:১০

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব সবাইকে যারা এখানে আসবেন, অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন। যদিও আমরা শুরু থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছিলাম বলেই এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু আপনারা দেখেছেন এখন আবার বলছে, দ্বিতীয় ওয়েভ, কোথাও কোথাও তৃতীয় ওয়েভ চলছে।’

করোনার মধ্যে নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস পর শুরু হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বইমেলা উদ্বোধন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা এখানে (বইমেলা) আসবেন, অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন।’

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা হলেও এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে মার্চে। করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছর নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস পর হচ্ছে এ আয়োজন। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে বইমেলা, তবে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে যেকোনো সময় আয়োজন শেষ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকাশকদেরও আমি ধন্যবাদ জানাই। এই মহামারির সময়েও তারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন আমরা জানি। সে কথা বিবেচনা করে আমি আমাদের পাঠক যারা বই পড়তে পছন্দ করেন বা বইমেলার ভেতরে ঘুরে ঘুরে বই দেখার ভেতরে যে আনন্দ, সে আনন্দ থেকে যাতে সবাই বঞ্চিত না হয় সে কথা চিন্তা করেই কিন্তু বইমেলাটা আজকে করা হচ্ছে।

‘তবে আমি অনুরোধ করব সবাইকে যারা এখানে আসবেন, অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন। যদিও আমরা শুরু থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছিলাম বলেই এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু আপনারা দেখেছেন এখন আবার বলছে, দ্বিতীয় ওয়েভ, কোথাও কোথাও তৃতীয় ওয়েভ চলছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাসটা (সার্স কভ টু) আরও মারাত্মক আকারে দেখা দিচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে যদিও আমরা টিকা দিচ্ছি, টিকা দেয়ার কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি; তারপরেও আমি বলব ৪৫ লাখের উপরে কিন্তু টিকা দেয়া হয়ে গেছে। এটা চলতে থাকবে এবং দ্বিতীয় ডোজটাও দেয়া হবে।’

পছন্দের বই সংগ্রহ করতে স্টলে ক্রেতার ভিড়

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরেও বলব টিকা দিয়েই মনে করবেন না সবাই একেবারে সুরক্ষিত হয়ে গেছেন। সেজন্য মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা এগুলো অবশ্যই সকলে মেনে চলবেন। নিজেকে সুরক্ষিত করা মানে অন্যকেও সুরক্ষিত করা। আমি বারবার বলে যাচ্ছি এবং আশা করি এ বিষয়ে দৃষ্টি দেবেন। বইমেলায় যাবেন, বইও দেখবেন-ধরবেন, কিন্তু তারপরেও স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে নিজেকে সুরক্ষিত করবেন।’

নির্ধারিত সময়ে মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ার পেছনের কারণ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘মার্চ মাসে আমাদের এ অনুষ্ঠানটা হচ্ছে, যদিও সব সময় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমেই করা হয়। তবে পয়লা ফেব্রুয়ারি এবার আমরা শুরু করতে পারিনি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণেই আমাদের এই সময় নিতে হলো।

‘টিকাদান শুরু করার পর আমরা মনে করলাম যে, একটু মনে হয় সময় নিয়ে দেখা দরকার কী অবস্থা হয়। যদিও এই মার্চ মাসেই করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল, আবার সে প্রাদুর্ভাব একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য সবাইকে আমি বলব, আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন। মার্চ মাস কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। আর এই মাসেই বইমেলার অনুষ্ঠান হচ্ছে।’

অন্য ভাষাকেও জানতে হবে

নিজের মাতৃভাষা জানার পাশাপাশি অন্য ভাষা সম্বন্ধেও জানা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নিজের মায়ের ভাষাকে মর্যাদা দেয়া এটা যেমন দরকার, অন্য ভাষাকেও জানা দরকার। এ জন্য অনুবাদ আমাদের একান্তভাবে দরকার।

‘এ জন্য বাংলা একাডেমিকে আমি সব সময় অনুরোধ করেছি যে, অন্যান্য দেশের সাহিত্য যেন আমরা জানতে পারি। কারণ সাহিত্যের মধ্য দিয়েই একটা মানুষের জীবনযাত্রা জানা যায়। তাদের সংস্কৃতি জানা যায়, তাদের ইতিহাস জানা যায়। অনেক কিছু জানার সুযোগ থাকে।'

তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি, বক্তৃতা দিই। অনেক কথায়, অনেক বক্তৃতায় যে কথাগুলো বলি সে কথাগুলো মানুষের মন ছুঁয়ে যায় কিন্তু তার থেকেও বেশি মন ছোঁয় সাহিত্যের ভেতর দিয়ে।

মধ্য দুপুরে কমে আসে ক্রেতার উপস্থিতি

‘সাহিত্যের মধ্য দিয়ে কোনো বার্তা যদি আমরা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারি, সেটার স্থায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশি হয়। আবেদনটাও বেশি হয়। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে একটি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি জানার সুযোগ হয়। মানুষের জীবনমান সম্পর্কে জানা যায়, জীবনযাপন সম্বন্ধে জানা যায়। তাছাড়া সাহিত্যের ভেতর দিয়ে ইতিহাস, সংস্কৃতি সবই তো আমরা জানতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা ভাষা প্রচলন করবার, বাংলা ভাষাকে আরও শক্তিশালী করা একান্তভাবে দরকার। কারণ আমরা যত ভাষাই শিখি না কেন, মায়ের ভাষায় যে শিক্ষাটা আমরা নেই সেই শিক্ষাটাই হয় প্রকৃত শিক্ষা।

‘তবে এখানে একটু দুঃখের কথা বলে রাখি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার এ আন্দোলন, এ আন্দোলনে জাতির পিতার যে অবদান রয়েছে একসময় দেশের ইতিহাস থেকে সেটা কিন্তু মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এটা হচ্ছে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এবং আমাদের জ্ঞানী-গুণী অনেকের কথা ছিল, উনি তো জেলে ছিলেন, উনি আবার আন্দোলন কী করবেন। কিন্তু জেলে ছিলেন কেন? তিনি জেলে গেলেন কেন?’

ছাপা বইয়েই স্বাচ্ছন্দ্য

প্রত্যেকের জীবনে বই পড়ার অভ্যাস থাকাটা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের জীবনে যদি বই পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে কিন্তু সময় কাটাতেও কষ্ট হয় না। যদিও এখন ডিজিটাল ডিভাইস, মোবাইল ফোনটোন এগুলো এত বেশি হয়ে গেছে, সেখানেও কিন্তু পড়ার সুযোগ এখন আছে।

‘হয়তো বই খুলে পড়তে হয় না। কিন্তু ট্যাব অথবা ফোন, যেকোনো ইলেট্রনিকস ডিভাইসের মধ্যেও আপনি পড়তে পারেন।’

অবশ্য এখনো ছাপার অক্ষরের বই পড়তেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার কথা জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘তবে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি মনে করি, একটা বই হাতে নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টে উল্টে পড়া, এর আনন্দটাই আলাদা। এটা কিন্তু যন্ত্রের মধ্যে পাওয়া যায় না।

মেলার প্রবেশমুখে সতর্ক অবস্থায় পুলিশ

‘তবে হ্যাঁ যন্ত্রটা সাথে নিতে সুবিধা বেশি, অল্প জায়গায় অনেক বেশি পাওয়া যায় এ সুবিধাটা আছে। তবে আমি বলব, বইয়ের আবেদনটা কিন্তু আলাদা। এটা কোনোদিন মুছে যাবে না। আর বই কিন্তু স্থায়ীভাবেও থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের যেন বই পড়ার দিকে ঝোঁক হয়, অভ্যাস হয়। যেমন আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি- ছোটবেলায় ছোট্ট শিশু জন্ম নেয়ার পর থেকেই তাদের বই পড়ে শোনানো এটা কিন্তু আমাদের বাড়িতে সব সময় একটা অভ্যাস ছিল এবং এটা এখনও আছে। এমনটি আমাদের ছেলেমেয়েরাও তাদের বাচ্চাদের জন্মের পর থেকেই তাদের বই পড়ে শোনানো শুরু করে।

‘এখন আমাদের যারা ছোট সবাইরই বই পড়ার দিকে একটা ঝোঁক। বই পড়তে হবে, দেখতে হবে বা বই হাতে নিতে হবে। এ জন্য সব সময় ছোট একটা লাইব্রেরি তাদের জন্য করে রাখি। বাচ্চারা বইটা যেন দেখে বা পড়ে। কাজেই বই পড়া অভ্যাসটা যেন অব্যাহত থাকে। এ জন্য আপনারা একটু যত্নবান হবেন, এটাই আমরা চাই।’

স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না

বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বেড়াবার দেশ নয় বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আওয়ামী লীগ যখন থেকে সরকারে এসেছে তখন থেকেই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছে বলেই একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ জাতির পিতা গড়ে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন।

‘দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছরে। বাংলাদেশের মানুষ যখন ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করে, তখন থেকেই দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই বাস্তবায়ন শুরু করি। দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকারে আসি, তখন থেকে আমাদের এ প্রচেষ্টাই ছিল- বাংলাদেশ আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। যে দেশটি এত রক্ত দিয়ে এত সংগ্রাম করে স্বাধীন হয়েছে, সে স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। সে স্বাধীনতাকে সফল করতে হবে। বাংলাদেশ কারও মুখাপেক্ষী হবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াবে।’

এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় নিয়ে বসছে মেলা। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭ প্রতিষ্ঠানের ১৫৪টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪০৩ প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন থাকছে।

এবারও লিটল ম্যাগ চত্বর রাখা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি পাঁচটি উন্মুক্ত স্টলসহ মোট ১৪০টি স্টল দেয়া হয়েছে।

মেলায় একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এবারও শিশুচত্বর দেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথম দিকে শিশু প্রহর থাকছে না।

প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন থাকবে।

এ বিভাগের আরো খবর