বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাহাড়ে বস্ত্রশিল্পের বিপ্লব ঘটিয়েছেন যিনি

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২২ ০৮:২৬

রাঙ্গামাটির মঞ্জুলিকা চামকা একটি মাত্র তাঁতযন্ত্র দিয়ে যে বস্ত্র ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কালক্রমে সেটি শুধু যে একটি সফল উদ্যোগ হয়ে উঠেছে, তা-ই নয়, তিনি হয়ে উঠেছেন পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারী উদ্যোক্তাদের পথিকৃৎ।

পার্বত্যাঞ্চলে কারুশিল্পী ও তাঁত ব্যবসায়ী প্রথম আদিবাসী নারী মঞ্জুলিকা চাকমা। একমাত্র তিনিই পাহাড়ে তাঁতবস্ত্রের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। মাত্র ৫০ টাকায় একটি তাঁতযন্ত্র কিনেছিলেন তিনি। তা দিয়ে শুরু হয়েছিল বেইন টেক্সটাইলের যাত্রা। তার পথ অনুসরণ করে এখন পাহাড়ে হাজারও নারী উদ্যোক্তা।

রাঙ্গামাটি শহরে মঞ্জুলিকা চাকমার জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৬ অক্টোবর। পিতা কালী রতন খীসা ও মা পঞ্চলতা খীসার অতি আদরের মেয়ে তিনি। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে মঞ্জুলিকা চাকমা ছিলেন তৃতীয়। মাও ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কোমর তাঁত শিল্পী।

মঞ্জুলিকা চাকমা পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে। ১৯৬১ সালে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করার পরপরই তিনি সে বছর শাহ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৬৫ সালে আদিবাসী বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে ‘বেইন টেক্সটাইল’ নামে তাঁতবস্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শিক্ষকতায় অবদান রাখার জন্য ১৯৬৬ সালে তখনকার সরকার তাঁকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরস্কার তুলে দেয়।

শিক্ষকতা আর গৃহশিক্ষকতার পাশাপাশি তাঁতের কাপড়ের ব্যবসা দেখছিলেন। এরই মধ্যে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ১৯৭৩ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৭৬ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন নিজের ব্যবসায়।

কারুশিল্পে বিশেষ অবদান রাখার জন্য মঞ্জুলিকাকে নানা পদক দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ছবি: নিউজবাংলা

কারুশিল্পে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়া হয়। নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ২০২০ সালে তিনি বেগম রোকেয়া সম্মাননা পদক পান। রোকেয়া দিবসে ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে তাকে এ পদক দেয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

১৯৬০ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় মঞ্জুলিকার বিয়ে হয় চিরঞ্জীব চাকমার সঙ্গে। তার স্বামী চিরঞ্জীব চাকমা মঞ্জুলিকার টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করেন। তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের জননী।

মঞ্জুলিকা চাকমা প্রথম আদিবাসীদের কোমর-তাঁতের সঙ্গে আধুনিক তাঁতের পরীক্ষামূলক মিশ্রণ ঘটিয়ে সফলতা পান। বর্তমানে তার ১৬-১৭টি বিক্রয়কেন্দ্র। এতে প্রায় দুই শতাধিক নারী ও পুরুষ কাজ করেন। করোনার শুরু থেকে টেক্সটাইলের কাজ কমে আসে। ক্ষতি হয় লাখ লাখ টাকা। তিনি সরকারিভাবে কখনও সহায়তা পাননি বলে জানান।

মঞ্জুলিকা চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতে জুরাছড়ি উপজেলা থেকে ৫০ টাকায় একটি মাত্র তাঁত কিনেছিলাম। পরে একে একে ৫০টির বেশি তাঁতযন্ত্র বসেছে আমার টেক্সটাইলে। তাঁতের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। এমনকি প্রাইভেট টিউশনি করে যে টাকা জমিয়েছি, তার সঙ্গে গয়না বন্ধক রেখে তাঁতের ব্যবসা চালাতে হয়েছিল শুরুতে।

‘তখন দেড় শ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করত আমার টেক্সটাইলে। করোনা পরিস্থিতির আগে মাসে ২ লাখ টাকা আয় হতো। করোনার সময় তা ৫০ হাজারে নেমে আসে।’

তিনি জানান, তার এসব তাঁতবস্ত্র দেশের বাইরে পোল্যান্ড, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।

মঞ্জুলিকা চাকমা শুধু একজন শিক্ষক কিংবা তাঁত ব্যবসায়ী নন। তিনি একজন অভিনয় শিল্পীও। তার জীবনে তিনি নাটকে অভিনয় ও নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। তাঁতবস্ত্র ব্যবসায় ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া পদক দেয়া হয় মঞ্জুলিকাকে। এ অনুভূতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছি সঙ্গে চার লাখ টাকাও দিয়েছিল সরকার। কিন্তু টাকা তো বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে রোকেয়া পদকের সম্মান।’

এ বিভাগের আরো খবর