ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ (এস কে সিনহা) ১১ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ২৯ আগস্ট আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ঠিক করেছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদের সাক্ষ্য নেন।
এদিন আসামিদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি হয়। আদালতে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি ও মো. জসিম। এ সময় আরও কয়েকজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী কবীর হোসেন।
তিনি জানান, মামলার অভিযোগপত্রে তালিকাভুক্ত ২১ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ করেছে আদালত।
আসামিদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) কারাগারে। এ ছাড়া ব্যাংকটির সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা জামিনে রয়েছেন।
পলাতক রয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়।
২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন মামলাটি করেন। একই বছরের ৯ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ। একই বছরের ১৩ আগস্ট একই আদালত ১১ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
মামলায় বলা হয়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দুটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। তারা চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।
আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন সিনহা।
ঋণের জামানত হিসেবে রণজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়। ওই দম্পতি সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয় মামলার এজাহারে।
দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম যাচাই-বাছাই ছাড়া ব্যাংকের নিয়মনীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন।
এজাহারে বলা হয়, অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে ঋণের আবেদন অনুমোদন করা হয়। পরদিন চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় তার হিসাবে এই টাকা জমা হয়।
পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা তোলা হয়। এর মধ্যে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার হিসাবে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, রণজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনে সে সময়ের প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন।
সিনহা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। সে সময় তিনি ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও এক মাস পর সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
আদালতে জমা দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন আসামিরা। এটি দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যে ধারায় মামলা করা হয়েছে, তাতে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।