কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ।
সাক্ষীরা মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আদালতে হাজির হয়েছেন বলে আদালতের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সোমবার থেকে শুরু হয়ে তিন দিন চলবে (২৫ আগস্ট পর্যন্ত) সাক্ষ্য নেয়া।
মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের কার্যক্রম।
মঙ্গলবার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও এসআই লিয়াকত জেরা শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
তিনি জানান, সোমবার প্রদীপ, লিয়াকত ছাড়া বাকি আসামিদের জেরা শেষ হয়েছে।
আজ জেরা পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে কড়া নিরাপত্তায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে ১৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) সন্তোষ বড়ুয়া জানান, চলতি বছরের গত ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মামলাটির অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ঠিক করে আদেশ দিয়েছিলেন।
আজ সিনহার সঙ্গী সাহিদুল ইসলাম সিফাতসহ আরও কয়েকজন সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার প্রথম ১৫ সাক্ষীর সাক্ষ্যর জন্য আদালত থেকে সমন দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সেরেস্তাদার নুরুল কবির।
তিনি জানান, এই তিন দিন ৫ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে। এ মামলায় ৮৩ জন চার্জশিটভুক্ত সাক্ষী রয়েছে।
গতকাল সাক্ষ্য দেয়ার পর আদালত থেকে বের হয়ে সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসী বলেন, ‘ওসি প্রদীপের নির্দেশে সাবেক ইন্সপেক্টর লিয়াকত গুলি করে সিনহাকে হত্যা করে।
‘আদালতে জবানবন্দি দিয়েছি। সাক্ষ্য গ্রহণ করার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আমাকে জেরা করেন।’
মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মোজাফফর আহমদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ
এ ছাড়া পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
কীভাবে নিহত হন সিনহা
২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে মেজর সিনহা নিহত হন পুলিশের গুলিতে। টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকতসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসী।
পরে গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনার সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তিন সদস্যসহ পুলিশের তিন সোর্সকে।
চার মাসেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
এর মধ্যে ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত ২৭ জুন মামলার ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।