ধর্মীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার পর আফগানিস্তানের মাটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ব্যবহার হবে না- ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর সংঘ ওআইসির বৈঠকে এমন আশার কথা বলেছে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তান পরিস্থিতি ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধিদের এক জরুরি সভায় সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সোমবার এই আশার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আফগানিস্তানের ভূমি অন্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। ওআইসির সদস্য দেশগুলো এ বিষয়ে একমত থাকবে বলেও আমরা আশা করি।’
৯০ দশকের পর গত ১৫ আগস্ট আবার আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এর আগে যখন তারা দেশটির নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন উগ্রপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী আল কায়েদা সেখানে দৃঢ় অবস্থান নেয়। এই গোষ্ঠীই ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে আক্রমণ করেছে- এমন অভিযোগ করে এর নেতা ওসামা বিন লাদেনকে তাদের হাতে তুলে দিতে তালেবানের কাছে দাবি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তারা রাজি না হওয়ার পর দেশটিতে হামলা করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটি।
২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের পর দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবার আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তালেবান।
ওআইসির বৈঠকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
তারা অঙ্গীকার করেছে, ৯০ দশকের মতো কট্টর ধর্মীয় শাসন চালাবে না। নারীদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে। এরই মধ্যে ঘোষণা এসেছে, বোরকা পরা বাধ্যতামূলক নয়। এমন ঘোষণাও এসেছে, আফগানিস্তানের মাটি অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।
এই পরিস্থিতিতে দেশটির অবস্থা নিয়ে বৈঠকে বসে ওআইসি। এতে আফগানিস্তানে দ্রুত স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং আটকে পড়া বিদেশিদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
ওআইসিতে ঢাকার রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগান জনগণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ তার নিজস্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে এবং অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।
“দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বাংলাদেশের নীতি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের ভাষণ থেকে অনুসৃত, যেখানে তিনি ঘোষণা করেছিলেন ‘আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে যৌথ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করব’।”
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশিসহ সকল বিদেশিকে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছি।
‘আমরা চাই আফগানিস্তানের মানুষ দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা উপভোগ করবে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূকৌশলগত অবস্থানের সুষ্ঠু ব্যবহার করবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগান জনগণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উন্নয়ন এবং মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা উচিত বলেও মনে করেন বাংলাদেশি দূত।
তিনি বলেন, ‘ওআইসির উচিত হবে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে ওআইসি ও এর সদস্য দেশগুলোর করণীয় বিষয়ে বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা।’
সভা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে একটি যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয়, যেখানে ওআইসি মহাসচিবকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।