দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রকল্প-২-এর চুক্তি সই অনুষ্ঠানে রোববার সকালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন তিনি।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, ‘আমি অনেক কথা শুনেছি, অনেক কথা বলেছি। আর কথা নয়, কাজ চাই। প্রতিশ্রুতি প্রদান নয়, প্রতিশ্রুতি পূরণ করা চাই। ওয়াদা দিলাম আর সময়মতো কাজ হচ্ছে না।
‘সময়মতো কাজ শেষ না হলে এ ওয়াদার কোনো দাম নেই। আমরা বারবার প্রতিশ্রুতি দিই, কিন্তু প্রতিশ্রুতি পালনে নানা সমস্যা দেখা দেয়। সময় বাড়ে। প্রাইজ এস্টিমেশনও বাড়ে। এটা খুব সমালোচনার বিষয় এবং এটা যুক্তিসংগতভাবেই সমালোচনা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশে রাস্তার কোনো অভাব নেই। রাস্তা অনেক রয়েছে, কিন্তু পরিবহনের শৃঙ্খলা, যানবাহনের শৃঙ্খলা আমরা এখন ফিরিয়ে আনতে পারিনি। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ, এটা মোকাবিলা করতে আমরা সফল হতে পারিনি। এটা হলো বাস্তবতা। শুধু কথা বলে লাভ নেই।
‘আমাদের কাজে দেখাতে হবে যে, আমরা যা বলি তা করি। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও…অহেতুক ওয়াদা করার পক্ষে নন। যে কাজ বলবেন, সে কাজ করতে হবে। সময়মতো করতে হবে, গুণগত মান বজায় রেখে করতে হবে।’
গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ বিলম্ব হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই যে গাজীপুর থেকে এলেঙ্গা মহাসড়ক আর কতদিন লাগবে? কেন বিলম্ব হচ্ছে? এটা তো এতদিনে শেষ না হওয়ার কথা না। যে প্রকল্প পরিচালক পারবে না তাকে চেঞ্জ করে দিন।
‘এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। প্রধানমন্ত্রী ২৩টি সেতু উদ্বোধন করেছেন আজ পর্যন্ত; ওভারপাস, তারপর আন্ডারপাস, তিনটা ফ্লাইওভার উদ্বোধন হয়েছে। তারপরও রাস্তা ওপেন করার কোনো খবর নেই। শুধু ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখিয়ে লাভ নেই; কথা বলে লাভ নেই। কাজটা করেন, তাহলে মানুষ দেখবে। কাজের মধ্য দিয়ে এ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই।’
যশোর-খুলনা সড়ক ও গাজীপুরে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নিয়েও নিজের অসন্তোষের কথা জানান কাদের।
তিনি বলেন, ‘আজ বারবার অভিযোগ পাচ্ছি যশোর-খুলনা সড়কের। এখন তো খুবই কঠিন, বাজে অভিযোগ আমার কাছে আসছে। এর কোনো সৎগতি কি হবে না? এই সড়ক নিয়ে আর কতকাল শুনতে হবে?
‘আরেকটা প্রজেক্ট এখানে গাজীপুরে। মানুষের ভোগান্তি উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে। একটা বিআরটি, এটা এখন গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে। এই বিআরটি প্রকল্প গলার কাঁটা। এটা আর নতুন করে বাড়ানোর কোনো দরকার নেই। যেটা আছে, সেটা শেষ করুন এবং রাস্তা দুই পাশে ইউজেবল রাখুন, পাসেবল রাখুন। এই কাজগুলোকে প্রায়োরিটি দিন।’
তিনি বলেন, ‘বিআরটিএর ড্রাইভিং লাইসেন্স দিন তাড়াতাড়ি। ইংরেজিতে নয়, বাংলায় যেন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হয়। এটা চালকদের পক্ষ থেকেও দাবি আছে, মালিক সমিতি থেকেও। কেন ইংরেজিতেই দিতে হবে? বাংলায় অসুবিধা কী?
‘আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাজীপুরের এ সড়ক, এলেঙ্গা, সাসেক ওয়ান তাড়াতাড়ি শেষ করুন। এটার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। যশোর-খুলনা সড়ক, বারবার বলছি। বারবার এই সড়কের বেহাল অবস্থা শুনে আমি লজ্জা পাই। কদিন পরপর রিপেয়ারিং আর অভিযোগ তো আছেই বিভিন্ন রকম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও অভিযোগ পান।’
কাদের বলেন, ‘গাজীপুরের ভোগান্তি দূর করুন, যশোর-খুলনার ভোগান্তি দূর করুন। এগুলো প্রায়োরিটি দিন। নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে বর্ষাকালে কাজ তো আগানো যাবে না। যেগুলো আছে সেগুলোর গুণগত মান বজায় রেখে শেষ করুন। বদনামের ভাগীদার হতে চাই না।’