ছোট ভাই হত্যায় বড় ভাই ১২ বছরের সৌরভের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনাকে তদন্ত কর্মকর্তার মারাত্মক অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার ক্ষমার আবেদনে অসন্তোষ জানিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছে আদালত। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
‘পুলিশের ভুলে ১২ বছরের শিশুর ঘাড়ে ছোট ভাই হত্যার দায়’ শিরোনামে একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদ যুক্ত করে হাইকোর্টে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের তলব করে। আদেশ অনুযায়ী রোববার সকালে তদন্ত কর্মকর্তা (পিবিআই) মুনসুর আলী এবং প্রাক্তন তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আদালতে হাজির হন।
এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘পুনঃতদন্ত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষই আবেদন করেছে। যেটা সহজে দেখা যায় না। সাধারণত দেখা যায় পিটিশনাররাই পুনঃতদন্তের আবেদন করেন, কিন্তু এ মামলায় দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষই পুনঃতদন্তের আবেদন করেছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। এখন তার আবেদনে আপনারা যদি সন্তুষ্ট হন, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।’
এ সময় আদালত বলে, ‘উনি যদি ভুল করেন তাহলে তাকে কি আমরা ছেড়ে দেব?’
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সেটা আপনাদের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। আমি বলতে চাচ্ছি, হি অলসো পার্ট অব দ্য প্রসিকিউশন। তিনি যে ভুল করেছেন সে ভুলের জন্য তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।’
তখন আদালত বলে, “এটা মারাত্মক অপরাধ, যেটা তিনি করেছেন। তিনি এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করেছেন। ১২ বছরের একটি শিশুর স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছে, ‘আমি আমার ভাইকে মেরে ফেলেছি’। এটা কি সম্ভব। ১২ বছরের একটি ছেলে ৮ বছরের একটি ছেলেকে মেরে ফেলবে!”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা বেদনাদায়ক। এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়।’
এ সময় আদালত বলে, ‘আপনি কীভাবে ১৬৪ (স্বীকারোক্তি) নিলেন। এটা তো মারাত্মক একটা অভিযোগ। নেগলিজেন্স (অবহেলা) হয় কখন, সেটা মনের অজান্তে হয়। এটা তো অবহেলা না। এটা মারাত্মক অপরাধ।’
পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৬ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন। তবে ওই দিন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে আসতে হবে না। ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকলেই হবে। তবে আরেক তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমারকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
গত ২৯ জুন এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। ওই দিন শুনানিতে আদালতে যুক্ত ছিলেন শিশু সৌরভসহ তার মা ও বাবা।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে ছোট ভাইকে হত্যার দায় নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে ১২ বছর বয়সী বড় ভাইকে। ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়ার কাটাখালি গ্রামের একটি পাটক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় মহিদুল ইসলামের ছেলে সোহাগের মরদেহ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় বড় ভাই সৌরভকে। জোর করে হত্যার স্বীকারোক্তিও নেয়া হয়।
এ মামলায় এখন বাড়ি ছাড়া পুরো পরিবার। এদিকে সন্তান হত্যা এবং আরেক সন্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ থেকে রক্ষা করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোনো কূল সহায়তা না পেয়ে দিশাহারা পরিবারটি।