১৩ বছর ধরেই যুক্তরাজ্যে। সে দেশের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। পেয়েছেন কি না, সেই তথ্য আর আসেনি।
লন্ডনে বসেই বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ার পর রাতেই তাকে করা হয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এরপর থেকে দলের সর্বেসর্বা কার্যত তিনিই। গত বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হলেও তিনি রাজনীতি নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছেন না।
তারেক রহমান দেশে ফিরবেন-এমন ঘোষণা কতবার বিএনপির পক্ষ থেকে এসেছে, তা গুণে শেষ করা যাবে না। তবে বক্তব্যের পর সুনির্দিষ্ট সময় আর জানানো হয়নি।
তবে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেছেন, তাদের নেতার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। আর তিনি নিজেও তাকে সেই পরামর্শ দেবেন না। তিনি বলেছেন, এখন রাজনীতির চেয়ে তাদের নেতার বেঁচে থাকাটাই জরুরি।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গটি আবার সামনে এসেছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বার্ষিকীতে।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে যে ৪৯ জনের সাজা দেয়া হয়, তাতে তারেক পান যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তিনি আরও তিনটি মামলায় মোট ১৯ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত। পাশাপাশি জরিমানা হয়েছে ২২ কোটি টাকার বেশি।
তবে দেশের বাইরে থাকায় তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি আর গ্রেনেড হামলার বার্ষিকীতে এই ঘটনার জন্য আবার তারেক রহমানকেই প্রধানভাবে দায়ী করলেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামলার আগে পরে নানা ঘটনা তুলে ধরে বলেছেন, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমর্থকে হামলার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন তারেক রহমান।
২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তারের পরের বছর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। কথা ছিল চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরবেন।
তবে দুর্নীতিসহ নানা মামলার আসামি তারেককে আদালতে হাজির হওয়ার একাধিক নির্দেশ তিনি উপেক্ষা করেছেন। এর মধ্যে চারটি মামলাতে সাজাও হয়ে গেছে।
তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন এমন প্রশ্ন রাখা হয় বিএনপির তিন জন জ্যেষ্ঠ নেতার কাছে। তিন জনই বলেছেন, শিগগির দেশে ফিরবেন তাদের নেতা। তবে সেই শিগগিরটা কবে, সেটি আর বলেননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি তো আর শখ করে বিদেশে বসে নেই। নানা মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা করে উনাকে কোণঠাসা করে রেখেছেন। দেশে তো উনাকে হত্যা করার চেষ্টাও করা হয়েছে।
'তবে উনি ফিরবেন। খুব শিগগিরই ফিরবেন। জনগণের ভালোবাসায় তাদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে দমন করতে তিনি ফিরবেন।'
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খানও অবশ্য এমন প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করেন। বলেন, ‘আপনারা ক্ষণে ক্ষণে নির্বোধের মতো প্রশ্ন করেন কেন। পায়ে বেড়ি বেধে দিয়ে বলছেন, তারেক রহমান আসেন না কেন? এটা কোন প্রশ্ন হলো?’
পর মুহূর্তেই তিনি বলেন, 'যাই হোক। অপেক্ষা করুন। দল ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারেক রহমান সেটার নেতৃত্ব দেবেন। শিগগিরই দেশের বিপদগ্রস্ত জনগণ তাকে পাশে পাবে। শিগগির তিনি আসছেন।'
তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার তেমন সম্ভাবনা দেখছেন না দলের আরেক বর্ষীয়ান নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির সেই সদস্য বলেন, ‘এখন তো আর কেউ রাজনীতি করতে জানে না। সেই স্ট্রেংথ নবীনদের মধ্যে নেই। বুক পেতে গুলি খাওয়ার সাহস নেই। আমাদের বয়স হয়েছে, শরীর ঠিকঠাক কাজও করে না। উপদেশ দেয়া ছাড়া তো কিছু করারও নেই।
'উনার দেশে না আসাই ভালো। এই সরকার এখন দিন রাতের পার্থক্য বদলে দিয়েছে। বেঁচে থাকলে আন্দোলন করা যাবে অনেক।'