বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্রেনেড হামলার রায় কার্যকরে আরও ৭ বছর?

  •    
  • ২১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০২

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেছেন, হাইকোর্টে শুনানি শুরুর বিষয়টি দ্রুত করার পাশাপাশি ডেথ রেফারেন্সসহ আসামিদের করা আপিল আবেদনকে অগ্রাধিকার দিতে তারা উদ্যোগ নেবেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সেই দিনটির পর দেড় যুগ পেরিয়ে গেছে। মামলার বিচার হয়ে রায় হয়েছে তিন বছর আগে। এখন সেটা হাইকোর্টে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ। দেশের সবচেয়ে আলোচিত এই মামলার শুনানি কি অন্য ১০টি মামলার গতিতেই এগোবে?

আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টে আপিল শুনানির ক্ষেত্রে যদি বর্তমান ক্রম অনুসরণ করা হয়, তাহলে শুনানি শুরু হতে আরও চার বছর লেগে যাবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি হলে যেকোনো সময়ই হতে পারে।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেছেন, হাইকোর্টে শুনানি শুরুর বিষয়টি যাতে দ্রুত হয়, যাতে ডেথ রেফারেন্সসহ আসামিদের করা আপিল আবেদনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়, সে জন্য তারা উদ্যোগ নেবেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, এখন প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলেই মামলাটির শুনানি শুরু হবে।

এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এখন মামলাটি শুনানির জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। হাইকোর্টে মামলার পেপারবুক তৈরি হয়েছে। মামলায় পলাতক আসামিদের রাষ্ট্রীয় আইনজীবীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই মামলাটি শুনানির জন্য আদালতে মেনশন করব। চলতি বছরের মধ্যেই আপিল শুনানি শেষ করতে পারব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টে আসামিদের সাজা নিশ্চিত হলে পলাতকদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হয় বছর এবং ক্রম অনুসারে। সে হিসেবে হাইকোর্টে এখন ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের মামলাগুলোর শুনানি চলছে। নম্বর ও বছরের ক্রম অনুযায়ী যদি শুনানি হয়, তাহলে এ মামলাটির শুনানি করতে আরও চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে।

‘দেখা গেছে, মামলাটি ২০১৮ সালে রায় হওয়ার পরে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ডেথ রেফারেন্স রেকর্ড হয়েছে এবং পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। যতটুকু জানি মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত আছে। কিন্তু কথা হলো, বিগত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকার কারণে শুনানি হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘হয়রানি করার জন্যই এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।’

এ মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২১ আগস্ট মামলার পেপারবুক আমরা হাতে পেয়েছি। এখন পেপারবুক যাচাই-বাছাই এবং মামলার প্রস্তুতির আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। সব প্রস্তুত হলে বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

গত বছরের ১৬ আগস্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে বিজি প্রেস থেকে হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়।

ঘটনার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেয় বিচারিক আদালত। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় এবং ১১ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। এরপর ওই বছরের ২৭ নভেম্বর দুই মামলার রায়সহ প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়। এরপর এ মামলার পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। পরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক তৈরি হয়।

এদিকে ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি এ মামলায় আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সে সময় বেঞ্চ দ্রুত পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেয়।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি বিচারপতি শেখ আব্দুল আউয়াল ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এ মামলায় দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক দুই আইজিপি শহীদুল হক ও আশরাফুল হুদা জামিন নেন। ফলে এখন ৪৪ আসামির আপিল আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।

তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। তখন জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হামলার ছক করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে এসেছিল হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। দুই বছর তদন্তের পর আরও ৩০ জনকে আসামি করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২।

দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলার ঐতিহাসিক রায় দেয়া হয়। রায়ে ৪৯ জনকে সাজা দেয়া হয়।

চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।

পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে আদালত।

এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহীদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। আরেকটি ধারায় খোদাবক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে অন্য মামলায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আর পলাতক রয়েছেন তারেক রহমানসহ ১৬ আসামি।

এ বিভাগের আরো খবর