বরিশালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ যখন বিব্রত, সাধারণ সম্পাদক যখন বলছেন, দলীয় পরিচয়ের কারণে কেউই প্রশ্রয় পাবেন না, তখন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বললেন, ‘এ ঘটনাকে পুঁজি করে কাউকে পানি ঘোলা করতে দেয়া হবে না।’
তদন্তে সত্য উদঘাটিত হওয়ার আগে এ নিয়ে অতিমাত্রায় কথা বলা বা কিছু করাও সমীচীন হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন।
বুধবার রাতে ব্যানার অপসারণ নিয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথা-কাটাকাটি হয়।
প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালান। আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ চারজন আহত হন।
সংঘর্ষের পরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে পুলিশ অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আবার ইউএনওর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের পর থমথমে ছিল বরিশাল সিটি। ছবি: নিউজবাংলা
এই ঘটনাটি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। আর গত রাতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর গ্রেপ্তার দাবি করা হয়। এই বিবৃতিতে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও তার অনুসারীদের ‘দুর্বৃত্ত বাহিনী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাহী কর্মকর্তা কীভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের দ্বারা হেনস্তা হয়েছেন।’
এই বিবৃতির বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি দেখেছি প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি করে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে আসবে আসলে কী ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভিযোগের বিষয়ও তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তবে এই ঘটনাকে পুঁজি করে কাউকে পানি ঘোলা করতে দেয়া হবে না। এবং আমি মনে করি, তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটিত হওয়ার আগে এ নিয়ে কারও অতিমাত্রায় কথা বলা বা কিছু করা সমীচীন হবে না।’
‘বরিশালের ঘটনাটি অনভিপ্রেত ও অত্যন্ত দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের দলের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। আমাদের দলের কথা বলে বা দলেরই কেউ কোনো অপকর্মে লিপ্ত হলে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন।’
বরিশালের ঘটনাটি এখনও তদন্তাধীন এবং দুটি মামলা হয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৬০ জন গুলিবিদ্ধ ও অনেকের আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটিও দেখা হচ্ছে। তদন্তাধীন বিষয়ে বেশি কথা বলতে চাই না, তদন্তের ভিত্তিতে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাস বাঙালির শোকের মাস। এই আগস্টেই আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু মুজিবকে হারিয়েছি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও এ মাসেই হারিয়েছি।’
বঙ্গবন্ধু যেভাবে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন, তাতে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় যে নিজের প্রাণ, তা হাতের মুঠোয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছে বাঙালিরা, এ জন্যই বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি- বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।