ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর শোকের আবহে পালন হচ্ছে পবিত্র আশুরা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুসলমানদের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি পালন করতে দেখা গেছে রাজধানীসহ সারা দেশে।
পুরান ঢাকার হোসেনী দালান ইমামবাড়া থেকে শুক্রবার সকালে বের করা হয় তাজিয়া মিছিল। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ইমামবাড়ার ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকে মিছিল।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে মিছিল, জমায়েত হয়েছে।
১০ মহররম পালনে হোসেনী দালান থেকে সকাল ১০টায় তাজিয়া মিছিল বের হয়। মিছিলে অংশ নেন সব বয়সের নারী-পুরুষ।
শিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিলটি গত বছরের মতো এবারও ইমামবাড়ার ভেতরেই ঘুরেছে। প্রচলিত তাজিয়া মিছিল নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে মোতায়েন ছিল র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ দল।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কালো-লাল-সবুজের নিশান উড়িয়ে চলে তাজিয়া মিছিল। বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ কান্নার ধ্বনি তোলেন শতাধিক মানুষ।
কেউ ‘শোকগীতি’ পড়তে পড়তে, কেউবা বাদ্য বাজিয়ে ঘুরতে থাকেন জমায়েতে।
মিছিলের সামনে ছিল কালো কাপড়ে মোড়া ইমাম হোসেনের (রা.) তাজিয়া (প্রতীকী কবর)। নারী-পুরুষ ও শিশুদের হাতে ছিল অসংখ্য কালো, লাল ও সবুজ নিশান। তরুণরা হাতে হাতে বিচিত্র আলাম (দীর্ঘ লাঠির মাথায় পতাকা) নিয়ে অগ্রসর হন।
তাজিয়া মিছিল উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকেই পুরান ঢাকার হোসেনী দালানে বিপুলসংখ্যক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়। মিছিলের জন্য সেখানে আসা লোকজনকে তল্লাশি করে ভেতরে পাঠানো হয়। তল্লাশি ছাড়া কাউকে দালানের ভেতরে ঢুকতে কিংবা বের হতে দেয়া হয়নি।
তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয়া মোহাম্মদ রায়হান আলি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১০ মহররমের দিনে ইমাম হোসাইন তার পরিবারসহ কারবালায় মৃত্যুবরণ করেন। শোকের ঘটনা স্মরণে আমরা তাজিয়া মিছিল বের করি। ওনার যে ঘোড়া ছিল সেটিকে স্মরণ করে এখানে ঘোড়া সাজানো হয়।’
মিছিলে থাকা মো. আহসানউল্লাহ বলেন, ‘ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী হজরত হোসেনের পুরো পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছিল। তার উদ্দেশে এই শোক আমাদের পূর্বপুরুষরা করে এসেছেন, আমরাও করছি। এইটা হইছে মঞ্জিল।’
তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয়া চল্লিশোর্ধ্ব নারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ইবাদত আল্লাহপাকের কাছে। সে ইবাদতটাই আমরা করে থাকি।’
হোসেনী দালান ইমামবাড়ার তত্ত্বাবধায়ক এমএম ফিরোজ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আশুরা মিছিলের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা ছিল, বাইরে বের হওয়া যাবে না। আমরা সেটিকে সম্মান জানিয়ে ভেতরেই বের করেছি৷ আশা করি আগামী বছর আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারব।’
র্যাব-১০-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর আনিস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডগ স্কোয়াড ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট রয়েছে।’
হিজরি ৬১তম বর্ষে বা ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে ১০ মহররম ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) শহীদ হন।
দিনটিকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর পালন করেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মনে করেন, পবিত্র আশুরার আত্মত্যাগের আদর্শ সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রেরণা জোগায়।