পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক ২২ বছর। হত্যা মামলায় ফাঁসির রায় হলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে। তিনি নাম-পরিচয় বদলে দিব্যি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। রওশন আলী ওরফে উদয় মণ্ডল নামের এই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরেফ হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি রওশন আলী ওরফে উদয় মণ্ডল। ইতোমধ্যে একাধিক মামলায় তার ফাঁসির রায় হয়েছে। দীর্ঘ ২২ বছর পলাতক থাকার পর রওশন ধরা পড়েন র্যাবের হাতে।
র্যাব জানায়, ১৯৯৯ সালে কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডের পর রওশন আলী রাজশাহীতে পালিয়ে যান। নাম-পরিচয় বদল করে তিনি গাজীপুরের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। উদয় মণ্ডল নাম নিয়ে তিনি রাজশাহীতে বসবাস করছিলেন। পলাতক রওশন রাজশাহীতে একটি গরুর খামার করেন। বুধবার রাতে রাজশাহীর শাহমখদুম থানার ভারালীপাড়া থেকে র্যাবের টিম গ্রেপ্তার করেছে উদয় মণ্ডল পরিচয়দানকারী রওশন আলীকে।
র্যাব দাবি করছে, রওশন ছিলেন একজন সিরিয়াল কিলার। কাজী আরেফ ছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যান, স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত সাতটি হত্যায় তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সেখানে জানান রওশন আলীর অপরাধ ও পলাতক জীবনের নানা তথ্য।
কমান্ডার মঈন জানান, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলায় একটি সভা চলাকালীন গুলিবর্ষণে নিহত হন কাজী আরেফসহ পাঁচজন। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ ২৯ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য শেষে ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১০ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।
আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০০৮ সালের ৫ আগস্ট উচ্চ আদালত ৯ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে অন্য ১৩ জনকে খালাস দেয়। কাজী আরেফসহ পাঁচ খুনের মামলায় ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি তিনজন আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়। এ ছাড়া একজন আসামি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। এ মামলার ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ৫ আসামি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। তাদেরই একজন রওশন আলী।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কুষ্টিয়ার বাসিন্দা রওশন আলী রাজবাড়ীর একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করেছেন। ১৯৯২ সাল থেকে রওশন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে চোরাচালান, হাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেন একটি বিশেষ মহলের হয়ে। মাদক কারবার ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী গ্রুপ। এ সময় চরমপন্থি গ্রুপের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।
‘১৯৯৮ সালের পর বেশ কয়েকটি হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নাম শোনা যায় রওশনের। রাজশাহীতে অবস্থান করার সময় তিনি আলী নামে পরিচিত হন। আদি নিবাস গাজীপুর বলে দাবি করেন। পলাতক জীবনের শুরুতে একটি গরুর খামার করেন তিনি। পরে জমি কেনাবেচার কাজে যুক্ত হন। মূলত রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়ার চেষ্টায় ছিলেন রওশন।’
র্যাবের দাবি, কাজী আরেফ হত্যায় অংশ নেয়া ছাড়াও সমন্বয় এবং পরিকল্পনায় ছিলেন রওশন। তিনি কুষ্টিয়ার বাকী চেয়ারম্যান ও আমজাদ মাস্টার হত্যায় জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। মেহেরপুরের গাংনীতে তার নামে ২০০৫ সালের একটি ডাকাতি মামলাও রয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল সংঘটিত বাকী চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। পরের বছর স্কুলশিক্ষক আমজাদ হত্যার ঘটনাতেও মামলার চার্জশিটে প্রধান আসামি রওশন।