কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ‘শাস্তি হিসেবে’ দুই বছর বেতন না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজার ঘটনায় তিনি এ শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন।
সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার তদন্তে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে ১০ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরর সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজমের সই করা প্রজ্ঞাপনটি বুধবার গণমাধ্যমে আসে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপসচিব) সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে অভিযোগটিতে গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয়াদি বিবেচনা করে সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪ (২) (খ) বিধি অনুসারে তাকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার লঘুদণ্ড দেয়া হলো।
তিনি এই মেয়াদে কোনো বকেয়া পাবেন না, পাশাপাশি বেতন বাড়ানোর জন্য মেয়াদটি গণনা করা হবে না বলেও জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।
অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলার পর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় সুলতানা পারভীনকে। গত বছরের ২৫ জুন তিনি চিঠির জবাব দিয়ে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন।
তবে গত বছরের ৯ আগস্ট ব্যক্তিগত শুনানিতে মৌখিক বক্তব্য ও লিখিত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিভাগীয় মামলা তদন্তে বোর্ড গঠন করে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব আলী কদরের নেতৃত্বে গঠিত বোর্ডের তদন্তে সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
গত বছরের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাসায় হানা দিয়ে তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকিসহ ডিসি অফিসে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।
এরপর অধূমপায়ী আরিফের বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে ওই রাতেই এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এক দিন পর ১৫ মার্চ আরিফ জামিনে মুক্তি পান।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে কুড়িগ্রামের তখনকার জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দীন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। একই সঙ্গে এ ঘটনায় বিভাগীয় অভিযোগ দায়ের হয় এবং ঘটনা তদন্তে কমিটি করে মন্ত্রণালয়।