রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় দুটি বাঘ শাবকের জন্ম হয়েছে। এদের নাম রাখা হয়েছে দুর্জয় ও অবন্তিকা। করোনাকালে চিড়িয়াখানার নিরিবিলি পরিবেশে প্রথম বাচ্চা দিলো রয়েল বেঙ্গল জাতের বাঘ দম্পতি, যাদের নাম টগর ও বেলী।
সোমবার ঘটা করে জন্মনিবন্ধন করার অনুষ্ঠান করে এই দুই শাবকের নাম রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং চিড়িয়াখানার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ফিতা কেটে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে খাঁচার পর্দা সরিয়ে দুই শাবককে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেন।
দর্শনার্থীদের জন্য বাঘশাবক উন্মুক্ত করার আগে মন্ত্রী আ শ ম রেজাউল করিম এগুলোর নামের অর্থ বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রায় মানুষ বলে না যে, বাঘের বাচ্চা? আজকে আপনাদের সত্যিকারের বাঘের বাচ্চা দেখাব। এরা সত্যিকারের বাঘের বাচ্চা। দুর্জয় মানে যাকে সহজে জয় করা যায় না আর অবন্তিকার কাছাকাছি শব্দের মানে হচ্ছে রাণী। এই অর্থেই এই দুই শাবকের নাম রাখা হয়েছে।’
এ সময় মন্ত্রী চিড়িয়াখানার সার্বিক উন্নতির কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বর্তমান চিড়িয়াখানা আধুনিক বা উন্নত মানের করা হচ্ছে, চিড়িয়াখানার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে দর্শনার্থীদের তখন আর সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশের চিড়িয়াখানা দেখতে যেতে হবে না।
এ ছাড়া চিড়িয়াখানাকে সাফারি পার্কের আদলে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানান শ ম রেজাউল করিম।
স্ত্রী বাঘ বেলীর জন্ম ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বরে ও পুরুষ বাঘ টগরের জন্ম ২০১৭ সালের ১ মার্চে। করোনাকালে গত ২৬ মে তাদের ঘরে এই দুই শাবকের জন্ম হলো। নামকরণের আনুষ্ঠানিকতার কারণে এত দিন দুই শাবক জন্মের খবর গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।
জন্মের পর এই প্রথম বাঘ শাবকেরা এত মানুষ এক সঙ্গে দেখল। এর আগে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের ওপর নজর রেখেছেন। এক সঙ্গে এত মানুষ দেখে বিরক্তই ছিল মা বেলী। একটু পরপর গর্জন করে উঠছিল। শাবক দুটি মায়ের পিছু ছুটে বেড়াচ্ছিল। করছিল অদ্ভুত রকম শব্দ।
মায়ের সঙ্গেই দুই শাবককে রাখা হলেও বাবা টগরকে রাখা হয়েছে আলাদা খাঁচায়। ছবি: নিউজবাংলা
মায়ের সঙ্গেই দুই শাবককে রাখা হলেও বাবা টগরকে রাখা হয়েছে আলাদা খাঁচায়। বাবা বাঘকে আলাদা রাখা হয়েছে কেন জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর আবদুল লতিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় বাঘ তাদের বাচ্চাকে মেরে ফেলে। বাবার মধ্যে সেই প্রবণতা থাকে বেশি। তাই জন্মের আগেই মা-বাঘকে বাবার থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। দুর্জয় ও অবন্তিকার বয়স পাঁচ মাস হলে তাদেরও আলাদা খাঁচায় দেয়া হবে।’
দুর্জয়-অবন্তিকাকে নিয়ে এখন চিড়িয়াখানায় সব মিলিয়ে ১১টি বাঘ রয়েছে বলে জানান তিনি।
চিড়িয়াখানায় সর্বশেষ ২০১৬ সালে বাঘশাবক জন্ম নিয়েছিল। এত দিন পর আবার নতুন অতিথির আগমনে চিড়িয়াখানায় সোমবার ছিল উৎসবের আমেজ।
বাঘশাবক উন্মুক্তকরণের পর মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রতিকী হিসেবে ১৬টি কানি আর নিশি বক প্রকৃতিতে ছেড়ে দেন। পরে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এ ধরনের মোট ২৪৬টি বক প্রকৃতিতে উন্মুক্ত করবে। সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ার কারণেই বক উন্মুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।