করোনাভাইরাসের পেরু ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত ল্যাম্বডা (সি.থার্টি সেভেন) দেশেও শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর)।
মার্চ মাসে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করে ল্যাম্বডার উপস্থিতি পাওয়া যায় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মার্চের প্রথম সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সিকোয়েন্স করা হয়েছে, তাতে নতুন ল্যাম্বডা ভাইরাসটির প্রোটিন মিউটেশন পাওয়া যায়। বিশ্বের ২৮টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভ্যারিয়েন্টটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে ৪৯ বছর বয়সী একজন নারীর নমুনা সিকোয়েন্সিং করে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জাতে (জিআইএসএআইডি) জিনোম সিকোয়েন্সের এ তথ্য আপলোড করেছে বিসিএসআইআর।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বেশির ভাগ মিউটেশনের ফলে ভাইরাসটির মূল গঠনের ওপর খুব কম বা একেবারেই কোনো প্রভাব পড়ে না। সময়ের সঙ্গে এটি বিলুপ্তও হয়ে যায়। কিন্তু কোনো কোনো মিউটেশন এমনভাবে ঘটে, যা ভাইরাসটিকে টিকে থাকতে এবং বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্বের কমপক্ষে ৮৫টি দেশে শনাক্ত হয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। কয়েক মাস ধরে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ। এর মাঝে নতুন ধরন ল্যাম্বডা শনাক্ত হওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ।
এ পর্যন্ত করোনার পরিবর্তিত রূপের ও ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের যত ধরনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ডেল্টা সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। মহামারির দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশে দেশে সংক্রমণ বাড়তে থাকার জন্য দায়ী করা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে। এমন পরিস্থিতিতে জোরদার টিকা কার্যক্রম সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিভিন্ন দেশের মহামারি পূর্ববর্তী স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা।
গত এপ্রিলে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ডেল্টা। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়ায় পরের মাসেই।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম অস্তিত্ব জানা যায় মানবদেহে সংক্রামক করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতির। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটির রূপ পরিবর্তিত নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হচ্ছে।
এসব ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত আলফা ভ্যারিয়েন্টের (বি.১.১.৭) সংক্রমণের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। কারণ ২০১৯ সালে আবিষ্কৃত করোনার চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক ছিল নতুন ভ্যারিয়েন্টটি।
সর্বশেষ করোনার নতুন ধরন ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট পৃথিবীর প্রায় ৩০টি দেশে ছড়িয়েছে বলে সতর্ক করেছে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টকে এপ্রিলে ভারতে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও প্রাণঘাতী বলছে প্রতিষ্ঠানটি।
মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দি স্টারের এক প্রতিবেদনে গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এক টুইট বার্তায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় লিখেছে, ‘ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে পেরু থেকে, যেখানে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল থেকে পেরুতে করোনা শনাক্তের ৮১ শতাংশ ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। যুক্তরাজ্যে ইতোমধ্যে ছয়জনের শরীরে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি সংক্রামক।
পেরুর কায়েটানো হেরেডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাবলো সুকায়ামা জানিয়েছেন, পেরুতে করোনা শনাক্তদের ৮২ শতাংশ ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১০ শতাংশই মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর হার প্রতি এক লাখ জনে ৬০০ জন। এ থেকে বোঝা যায়, অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের হার বেশি।